(শ্রদ্ধেয় শ্রীযুক্ত বাবু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর
মহাশয়ের রাজর্ষি উপন্যাস।)
কে তুই বালিকা কোমল কলিকা,
কোথাকার ফুল তুই;
শুভ্র সুন্দর, উৎফুল্ল আনন,
আধফুট যেন যুঁই।
তরল, কোমল, ছোট খাট ওই
কচি বুকে তোর, হাসি!
কে ঢেলে দিয়েছে এত অপার্থিব
স্বরগের প্রেমরাশি।
অথবা কি তুমি স্বরগের দেবী?
বালিকার বেশ ধরে,
মানবের ভুল ভাঙ্গাইতে বুঝি
আসিলে ধরণী পরে?
আমাদের এই সংসার শুধু
স্বার্থ দ্বেষ হিংসাময়,
কয় জন জানে ভক্তি প্রণয়,
স্নেহ দয়া কারে কয়?
প্রীতি নাই হেথা মানবে মানবে;
আপন সোদর ভাই-
নিজ স্বার্থ তরে, তারো হৃদয়ের,
রক্ত চুষিয়া খাই।
এমনি মোদের পাষাণ পরাণ
দয়া মায়া লেশ নাই,
মানবের ঘরে বিলাইতে প্রেম
আসিলে কি তুমি তাই?
ঈশ্বরপ্রেম, আমাদের হায়!
নাই আর এক কণা;
দেবতারে ভেঙ্গে, গঠেছি রাক্ষসী,
করি তারি উপাসনা।
পূজি রাক্ষসীরে, আমাদেরো প্রাণ
হয়েছে পাষাণ প্রায়;
অকাতরে কত করি রক্তপাত,
ভুলেছি আপন মায়।
স্বরগে’ আমরা ফেলেছি করিয়া
নরকেতে পরিণত,
হৃদয় মোদের দংশিছে, পাপ-
বৃশ্চিক শত শত।
তুমি সুরবালা করুণা করিয়া
এলে বুঝি এ মরতে,
অন্ধ নয়ন ফুটাতে সবার,
লইতে প্রেমের পথে।
ঢাল ঢাল প্রেম সহস্র ধারায়
হিংসা দ্বেষ দূর হোক,
আঁধার হৃদয়ে হোক্ বিভাসিত
প্রেমের মধুরালোক।
যে প্রেমের বীজ রোপিলে আজিকে
একটা হৃদয়তলে,
জন্মিবে একদা বিটপী, তা হ’তে-
সুশোভিত ফুলফলে।
যে কাজের তরে সুরপুর হতে-
কলঙ্কিত এ ধরায়
এসেছিলে বালা, সাধিলে সে কাজ,
যাও তবে অমরায়।
এ কঠিন ধরা, নহে ত তোমার
থাকিবার যোগ্য স্থান;
শত কণ্টক, বিঁধিবে চরণে,
ব্যথিবে কোমল প্রাণ।
তোমারে লইতে স্বরণের ওই
খুলিছে স্বর্ণ দ্বার,
সুরনারী যত হাতে লয়ে মালা
দাঁড়াইয়া সারে সার।
তোমারি গলায়, পরাইবে বলে
পারিজাত ফুলমালা-
গেঁথেছে যতনে; তোমার মহিমা
গাহিতেছে দেববালা।
যাও তবে হাসি, দেবতার দেশে,
এসেছিলে যথা হতে;
আমরা তোমারে করিয়া স্মরণ
চলিতে প্রেমের পথে-
করিব যতন; ও শুভ্র সুন্দর
আধ বিকশিত মুখ-
রহিবে মোদের, হৃদয় মাঝারে
চিরদিন জাগরুক।
* * * * * *
যে গঠেছে এই করুণা, প্রেমের,
মধুর জ্বলন্ত ছবি,-
অনন্ত প্রেমের পাইয়া আস্বাদ
অমর সে মহা কবি।
৪ঠা আশ্বিন, ১৩০১।