আমি কি চাই, কিছু, ভেবে না পাই,
শুধু,- খুঁজে বেড়াই পাগল প্রায়;
কোথা সে অমৃত, প্রাণভূষিত,-
ব্যাকুল চিত পাইতে তায়।
কোথা হে তুমি আরাধ্য আমার?
কোথা গেলে দেখা পাব তোমার?
লুকায়ে কেন হৃদয় মাঝার-
দহিছ আমারে আর?
প্রকাশো তোমার মূৰ্ত্তি মোহন,
নেহারি আমি ভরিয়া নয়ন;
করিব যুগল পদে অৰ্পণ
ভক্তি প্রেম উপহার।
বসায়ে তোমার মানস দেশে,
সাজায়ে কল্পনা-কুসুম-বেশে-
পূজিব, দিব দক্ষিণা শেষে-
হৃদয় পরাণ মোর।
ছাড় লুকোচুরী, দাও- দাও- দেখা,
এস এস কাছে, কোথা- কোথা- সখা!
না পারি বহিতে এ জীবন একা
তোমার অভাবে ঘোর।
* * * * *
মরি! মরি! এই মূৰ্ত্তি কাহার,
উঠিল ভাসি’ নেত্রে আমার;
ওকি তুমি- ওকি তুমি গো আমার-
চিরজীবনের ধন?
একি বিশ্বরূপ দেখালে আমায়?
এ যে অন্তহীন, সীমা’ কোথায়?
ক্ষুদ্র সসীম এ হৃদে’ হায়!
অসীমে ধরিতে মন!!
বাঁধিতে আমি কি তোমায় পারি?
নিয়মে বাঁধা আমি যে তোমারি।
ক্ষুদ্র কণা এক, এ আমি তোমারি
তোমারি মাঝে যে আমি।
সেই আমি প্রভু তোমারে চাই,
সসীমে অসীম ভাবিয়া ধাই;
ক্ষুদ্র আমি ভাবি সম্ভব তাই,
(এ শুধু,)- পাগলের পাগলামী।
তুমি হে অনাদি, অনন্ত, অসীম,
অব্যক্ত, অমর, অতুল মহিম;
তুমি আপনাতে আপনি লীন,
হে জ্যোতি শকতিময়!
নাহিক সংখ্যা সৌন্দর্য্যের তব,
নিমেষে নিমেষে রূপ নব নব;-
ধর শক্তিভেদে,- ওহে ভবধব!
তোমার নাহিক ক্ষয়।
তুমি চিরকাল এক আছ প্ৰভু;
শক্তিরূপ ভেদে করিয়াছে তবু-
সাংখ্যাতীত, তব রেণু যারা,- বিভু
চিহ্ন শুধু ক্ষুদ্রতার।
আমিও তাহারি মাঝে এক জন,
ছোটো খাটো এই হৃদয়ে আপন-
তাই চাহি নাথ! করিতে ধারণ-
প্রেম মূরতি তোমার।
তুমি ছাড়া আর কিছুই যে নাই,
তুমিই যে সব তাই ভুলে যাই;
কে আমিরে লয়ে রয়েছি সদাই-
উল্লাস গরবভরে।
ভেঙ্গে দাও প্রভু এই অহঙ্কার;
আমার ভুলায়ে শিখাও তোমার;
যাক ঘুচে যাক মোহ অন্ধকার,
লও গো তোমার কোরে!
২১শে চৈত্র, ১৩০১।