দাও ওই বিষ-পাত্র! যত তীব্র হো’ক,
আগ্রহে আনন্দে আমি করিব গো! পান;
রো’ক তাহে যত তাপ, হাহাকার, শোক,
বরিব সে মরণেরে, বিনিময়ে প্রাণ।
-উদাস, বিষাদ, শূন্য, অবসাদময়,
জীবন; সে শুধু ভার, আর কিছু নয়।
চারিদিকে এত আলো, এত হাসি, গান,
এত শোভা, এত প্রেম, ফুটে ওঠে হায়!
তার মাঝে একা কি রে! ল’য়ে শূন্য প্রাণ,
নিরাশার মুখ চেয়ে বেঁচে থাকা যায়?
-কে বলে প্রকৃতি! হিয়া স্নেহময় তোর?
দেখি নাই হেন আর নির্দয় কঠোর!
তুই যদি স্নেহময়ী; তবে কেন বল্,-
স্নেহের সন্তান তোর হারায় যখন
চির-জীবনের তরে সৌভাগ্য সকল,
কেন না নয়নে তার নিবা’স্ তখন
যত তোর শোভারাশি? হায়! কেন তারে
তখনো সান্ত্বনা-বাক্যে চা’স্ ভুলাবারে!
যেখানে রয়েছে যত কাননে, গুহায়,
অন্ধকাররাশি তোর; কেন মা! তখন
না ঢালিয়া দিস্ তার নয়নেতে হায়!-
ঘুমের মতন? টানি’ কোলে নিরজন।
কেন না ফেলিয়া দিস্ জগতের পরে
চির-যবনিকা মা গো! হায়! তার তরে!
* * * *
দাও ওই বিষ-পাত্র তুলি’ করে মোর,
আগ্রহে আনন্দে আমি করিব গো! পান!
শত আঁখি ঝলসিত এ আলোকে ঘোর,
সঙ্কুচিত প্রাণ মম! লাজে ম্রিয়মাণ!
-জীবনের অভিশাপ! জীবন এ নয়!
দাও; আজ করি তার শেষ অভিনয়!
প্রকৃতি রে! তোর বুকে পেলু না আশ্রয়!
যাই আমি নিজে তার করিগে সন্ধান;
কোথায় সে রাজ্য, চির-অন্ধকারময়।
পাই যদি দেখা তার বিনিময়ে প্রাণ!
-যেখানে নির্ভয়ে আমি লুকাব আমায়।
-নহি হেথাকার কেহ; র’ব না হেথায়!
১৪ই আশ্বিন। ১৩০৪।