(১)
তুমি আর নাই এ ধরায়!
একি শুনিলাম কথা!
চলে গেলে হে দেবতা,
হায় কেন এতেক ত্বরায়!
-না পেলু দেখিতে আর,
সেই মূর্ত্তি প্রেমাধার
মন-সাধ রয়ে গেল মনে।-
বসি’ সে চরণতলে
হোলো না কি কৰ্ম্মফলে
শিক্ষালাভ হায় এ জনমে।
(২)
শোকে আঁখি উচ্ছ সিত নীরে!
হায় প্রভু, হায় প্ৰভু,
আর না দেখিব কভু,
আর না আসিবে তুমি ফিরে!
-জগতের গুরু হ’য়ে
তুমি এসেছিলে ল’য়ে
জ্ঞান ও আনন্দ, বিতরিতে।-
-গেলে তুমি দেখাইয়া
সারা বিশ্ব কি করিয়া
পারা যায় আপন করিতে।
(৩)
মনে পড়ে সে পুণ্য আশ্ৰম!
তোমার মহিমা-গাথা
প্রতি তরু, লতা, পাতা,
প্রতি ফুল, প্ৰতি বিহঙ্গম,
প্রতি ধূলিকণা সনে,
গগনে ও সমীরণে
আছিল জড়িত, বিকসিত,
মরতে কৈলাসভূমি;
তারি মাঝখানে তুমি
ছিলে শিব! সদানন্দ চিত!
(৪)
নির্বিকার সর্ব্বত্যাগী জন।
তবু কি মোহিনী-বলে
ওই চরণের তলে
এক হ’ত নিখিল ভুবন!-
রত্নময় শির শত
সম্ভ্রমে লুন্ঠিত হ’ত
ও উলঙ্গ তনুর সমীপে,
একটী সুমিষ্ট কথা
আনি’ দিত কৃতাৰ্থতা।
-ধরা হেন পুনঃ কি দেখিবে?
(৫)
হায় প্রভু, তুমি গেছ চলি!
শূন্য করি সে কৈলাস,
করি কাশী শোকাবাস,
সারা ধরণীর হৃদি দলি’!
কত আশা, কত সাধ
ভগ্ন আজি অকস্মাৎ,
-জুড়াবে কোথায় তাপী আর?
উচ্চ নীচ নির্ব্বিশেষে
হায় আর কোন্ দেশে
এমন উদার কোল কার?
* * *
(৬)
তুমি বারাণসী,
জগতে পবিত্রতর ধাম।
তোমার উন্মুক্ত বক্ষোদেশ
মহাত্মার সদা লীলাস্থান।
যুগ যুগ ধরি’ তব গৌরবকাহিনী
ভুবনেতে প্রচারিত গীত।
আশা হয় তব বক্ষঃ নব রত্নে পুনঃ
দেখিব উজ্জ্বল সুশোভিত।
মহাত্মারা যান্ চলি লীলা-অবসানে,
কিন্তু কিছু যান না কি রাখি’?
তাঁহাদের পূত বাণী, পবিত্র নিশ্বাস,
পূত দৃষ্টি, রহে চির জাগি’।
অলক্ষ্যে গঠিত হয় সে সকল দিয়া
মানসী সন্তান তাঁহাদের;
অনন্ত শোকেও এই অনন্ত সান্ত্বনা,-
চিরদিন আছে জগতের।
৩০শে আষাঢ়। ১৩০৬ সাল।