ধরণীর তপ্ত দেহ শীতল করিয়া
বহিছে মৃদুল সুখপরশ বাতাস;
কুসুমের মুখখানি ফুটাইয়া দিয়া
ভাণ্ডার লুটিয়া তার লইয়া সুবাস।
প্রথমযৌবন। শ্যামা লতা-বধূটীর
সরম-সন্ত্রস্ত তনু করি’ আলিঙ্গন;
ঝাউ-শিশুদের ল’য়ে সোহাগে সুধীর
দোলায়ে বুকেতে রাখি’ করিয়া চুম্বন।
নীল সিন্ধু-নীরে যেন সোণার কমল,
পূর্ণচন্দ্র পূর্ববদিকে হাসি’ মেলে আঁখি;
রূপের জ্যোতিতে দশ দিক্ ঝলমল,
সহসা আগুন যেন উঠিয়াছে লাগি!-
উদিয়া কখন্ একে একে তারারাশি
সে আলোক-সর-মাঝে ত্যজে নিজ কায়;
শুধু দু চারিটী, ক্ষীণ ম্লান হাসি হাসি’
প্রাণপণে আপনারে ফুটাইতে চায় ।
হোথা আম্রকুঞ্জ হ’তে ভেসে আসে স্বর
অবিশ্রান্ত, মধুময় গীত পাপিয়ার;
নন্দনের একখানি স্বপ্ন মনোহর
ধরাপরে রাজ্য আজি করেছে বিস্তার!
কোথা তুমি নন্দনের চির-অধিষ্ঠাত্রি!
রুচিরা কবিতা-রাণি! চির-সুধাময়ি!
চরণ-পরশে তব এ মধুর রাত্রি
হউক সার্থক ধন্য, এস তুমি অয়ি!
শূণ্য প্রাণে, একা হেথা সারা সন্ধ্যা ধরি’
রহিয়াছি বসি; এস! স্বৰ্গ হ’তে নামি’
দয়াময়ি! দাও প্রাণ পরিপূর্ণ করি’-
করুণা-ধারায় তব; অনুগত আমি-
নিতান্ত তোমার। কণ্ঠে পারিজাত-হার,
মন্দার-মুকুট শিরে, পুষ্পবীণা করে,
নীলপদ্ম নেত্রদ্বয় করুণা-আধার,
সোণালী আঁচল দোলে হৈম বক্ষ-পরে!
এস তুমি মনোহরে! এ নিকুঞ্জ-ছায়
তোমার সহিত আজি নিভৃত মিলনে
স্বর্গসুখ অনুভব করিব আত্মায়!
জাগি’ এ বাসর-রাতি কাটা’ব দুজনে।
তুলিয়া বীণার তারে মৃদুল ঝঙ্কার,
চম্পক-অঙ্গুলে তব, মিশাইবে সুর
ভুবনমোহন চির কণ্ঠের তোমার
সাথে তার, মৃদু মৃদু তরল মধুর!
প্রকৃতির স্বপ্নময় এ সৌন্দৰ্য সনে,
সে স্বরলহরী মৃদু, বীণার ঝঙ্কার,
মধুরে মিশিয়া মম মৰ্ম্মমাঝে মনে,
করিবে অপূর্ব এক মোহের সঞ্চার!
অবশ হইয়া প্রাণ পড়িবে আমার,
সমাজ সংসার সব ভুলে যা’ব আমি;
মনে হ’বে এ জগৎ শুধু দোঁহাকার,
আমি চিরদাস তব, তুমি তাহে রাণী।
১৩০৪। আশ্বিন।