কোথায়!

কোথা তুমি! কোথা তুমি বলে!
ব্যাকুল মরমভেদী স্বরে,
ডাকিতেছি যে সদাই, কেন না উত্তর পাই,
কোথা তুমি এক বার বল দয়া করে।

আমারে ছাড়িয়ে কি গো তুমি
হেথা হতে অতি- অতি- দূরে!
কনক অমরাবতী, যথা দেবনিবসতি,
রয়েছ দেবতা হয়ে সেই সুরপুরে?

সেথায় গেলে কি কভু আর
ফিরিয়া আসিতে নাই হেথা?-
তৃষিত আকুল প্রাণে, এক বিন্দু বারি দানে,
-সেথায় গেলে কি হয় এত কৃপণতা!

কঠিন পাষাণ দিয়া কি গো,
সৃজিত সে দেবলীলা ভূমি?
যে কভু সেখানে যায়, তারো কি হৃদয়, হায়!
হয় পাষাণের প্রায়, তাই কি গো তুমি-

শুনিয়া না শোন মোর কথা,
দেখেও দেখ না তাই মোর-
এ ক্ষুদ্র হৃদয়তলে, কি আগুন সদা জ্বলে,
বুকপোরা কি ভীষণ অন্ধকার ঘোর!

নাহি গলে তাই কি ও মন
এ অশ্রু, এ হাহাকার রবে?
হৃদয়ের এ আহ্বান, কর্ণে নাহি পায় স্থান,
সেথা গেলে হয় কি গো বধিরতা তবে?

না, না, না এ শুধু ভ্ৰম মোর,
তোমার যে মহান্ হৃদয়;
হেরিলে বিষণ্ণ মুখ, ফেটে যেত যার বুক,
আজ সে এমন হবে সম্ভব এ নয়।

কোথায় রয়েছ তবে দেব!
আমারে একেলা রাখি হেথা;
আসিবে না কিগো আর, দেখিবে না এক বার,
একটীও কবে না কি কথা?

কোথা আছ বল এক বার,
এস গো বারেক প্রভু হেথা;
তোমার অভাবে হাঁয়, এ হৃদয় মরুপ্রায়,
দেখ অভাগিনী সহে কি দুর্ব্বহ ব্যথা।

এক বার এক বার শুধু
এস দেব নিকটে আমার;
দেখ কুসুমিতা লতা, হইয়াছে বজ্ৰাহতা,
পুষ্পোদ্যান ধরিয়াছে শ্মশান আকার।

একি শুধু বৃথা আবাহন?
যেথায় রয়েছ এবে তুমি,
ধরণীর সুখ দুখ, নাহি পারে একটুক্‌
পরশ করিতে সেই পুণ্যময় ভূমি?

তবে কি গো তুমিও আমারে
একেবারে ভুলে গেছ হায়!
স্মৃতিটীও এ পারেতে, হয় না কি রেখে যেতে,
ধরণীর কিছু বুঝি সাথে নাহি যায়!

তবে কি গো চিরকাল শুধু
জিজ্ঞাসিব, উত্তর না পাব;
কোথা তুমি- এ কথার, উত্তর কে দিবে আর-
তুমি বিনা,- হায়! আমি কোথা দেখা পাব।

১১ই ভাদ্র, ১৩০১৷