লও, লও, সবি লও; নিয়েছ যখন নাথ!
এ জীবনে ছিল মম যত সুখ, আশা, সাধ!
সুতীক্ষ্ণ কৃপাণ ধরি’
কাট খণ্ড খণ্ড করি’
হৃদি-পিণ্ড এ আমার; খোঁজ তার পাত পাত,
কোথা যদি কিছু আজো থাকে সে ভাণ্ডার-জাত।
লও, লও, সবি লও; নিয়েছ তো সবি হায়!
এ দগ্ধ জীবনে মোর আছে আর কি কোথায়?
অপার শান্তিতে ভরা
কোথা’ সে সোণার ধরা?
কোথা সে মিলন মহা, চরাচরে একতায়?
প্রাণের মন্দির মম চূর্ণ আজি শতধায়!
গড়িয়া আপন হাতে আদর্শ দেবতা মম,
কত সাধে কত যত্নে করেছিনু সংস্থাপন;
প্রাণের কুসুমগুলি
বাছিয়া বাছিয়া তুলি’,
পূজিতাম; সে চরণে করিতাম সমর্পণ।
হরষ-উচ্ছ্বাসে সদা পূর্ণ ছিল প্রাণ মন!-
দেখ আজি দেখ চেয়ে ওই সে দেবতা মোর,
আঁধার শ্মশান-মাঝে সমাধি-নিদ্রায় ভোর!
দেবতারি সাথে মম
প্রাণের সে পুষ্পবন
অন্তর্হিত; ছিঁড়িয়াছে মরম-বীণার ডোর
এবে শুধু চিরসাথী হাহাকার আঁখি-লোর!
আর আছে, আছে আজো সুখের স্বপন সম,
স্মৃতি তার, দগ্ধ প্রাণে জুড়াবার স্থান মম;
আজো তারি তরে তাই
মাঝে মাঝে ভুলে যাই,
‘ত্রিভুবনে হতভাগ্য নাই হেন কোন জন!’
বড় ভালবাসি তারে, সে আমার প্রিয়তম।
লহ তাও; লবে যদি, প্রাণের গোপন-ঘরে
যেথা সে রয়েছে জেগে শোণিতের স্তরে স্তরে,
সুতীক্ষ্ণ কৃপাণ-ধারে
খণ্ড খণ্ড কর তারে,
পাষাণের যবনিকা ঢেকে ফেল তদুপরে;
দাও, তাহা দিবে যদি ধ্বংস করি চির তরে!
* * * *
কিন্তু সে যে মিশে গেছে জীবনের সাথে সাথে!
যে মালা রয়েছে বাঁধা দুজনার হাতে হাতে,
সে যে প্রাণ, দুজনার!
সে কি কভু ছিঁড়িবার?
অবিচ্ছেদে চির-গাঁথা, এ জনমে দুজনাতে;
-এ জন্মের শেষ তবে কর কৃপা দৃষ্টিপাতে!
কাৰ্ত্তিক। ১৩০৪।