মায়াবাদী উক্তি

নিয়ত মোহের চক্রে, ঘুরিয়া ঘুরিয়া ক্লান্ত,
হায়! ভ্রান্ত নর!
তথাপি এ শতজন্মে, বিতৃষ্ণা কি জন্মিল না,
তাহার উপর?
শুধুই অতৃপ্তি, দুঃখ, শুধুই নিরাশা, তাপ,
শুধু হাহাকার;-
করিয়াছ সার তাই; বিনিময়ে তোমারও
অমূল্য আত্মার!
কত ক্ষুদ্র এ জনম! হায়! কেন তারি তরে
এতেক বাঁধন?
সময় ফুরাবে যবে, কতক্ষণ যা’বে বল
করিতে ছেদন?
তার পর নব জন্মে করিবে প্রবেশ যবে,
সম্বন্ধ নবীন-
পাতিবে তাদের সাথে, এ জন্মের স্মৃতি যত
জন্মান্তে বিলীন!
মানব-জনম এই; জল-বুদ্বুদের মত
ক্ষণিকে মিলায়;
শুধু ভ্রান্তি! মরুভূমে যেন মরীচিকা, কিম্বা
স্বপনের প্রায়।
মানব জীবনই শুধু নহে ভ্রান্তি, মোহময়;
জগতো এ তাই;
নিয়ত পরিবর্তন; এই রহিয়াছে যাহা,
এই তাহা নাই।-
ফলে, পুষ্পে, শ্যাম পত্রে, হের সবে নব নব
শোভা ধরণীর;-
এক্‌টী অঙ্গুলী, তার পরিমাণ; এর বেশী
নহে সে গভীর।
ভিতরে সহস্র ক্রোশ মৃত্তিকার স্তূপ-রাশি,
কঠিন, কর্কশ!
নাই সেথা, হেথাকার চিত্ত-আঁখি-মুগ্ধকর
গন্ধ, রূপ, রস।-
আর এও জেনো মনে, ওই মৃধর্ম্মী, এই
মানব-শরীর;
ভিতরে কঙ্কাল-রাশি, চর্ম্ম-মাংস-আবরণে
ঢাকা সে বাহির।
মায়ার এ মন্ত্রপূত তূলিকার রেখা শুধু
উপরে প্রকাশ!
সহস্র প্রমাণে নর তবু ভুলি’ থাকে সদা,
-হায়! মোহ-দাস!

১৩০৪।