(শ্রদ্ধেয় শ্রীযুক্ত বাবু বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের মৃণালিনী উপন্যাস।)
মানবী কি দেববালা তুমি,
বুঝা নাহি যায়;
বালিকা কি নবীনা রমণী,
কি কব তোমায়?
বুঝিতে না পারিমু কখন;
চপলা বালিকা বেশে, কভু আসি হেসে হেসে,
দাও দরশন।
কখনো মহিমাময়ী দেবী;
শান্ত সে মূরতি মরি! সাধ যায় হৃদে ধরি,-
আজনম সেবি।
ভাল সাজে সকলি তোমায়;
যবে বালিকার বেশে, দেখা তুমি দাও এসে,
আপনাতে নাহি থাকা যায়।
সে মূৰ্ত্তি কুসুমময়ী, হেরিয়া মুগধ হই,
চেয়ে থাকি বিস্মিতের প্রায়;
বালিকার চপলতা, মধুরতা সরলতা,
ও আননে সবি শোভা পায়৷
যবে হেরি গম্ভীরা মূরতি;-
স্থপবিত্র জ্যোতি আঁকা, স্বরগ লাবণ্যমাখা,
সে সৌন্দর্য্যে প্রদানি ভকতি৷
গরীয়সী তোমার হৃদয়;
অপার্থিব প্রেমতত্ত্ব, শুনি যবে, ও মহত্ত্ব,-
অতুল বলিয়া মনে হয়।
তুমি বালা স্বরগকুমারী,
দেখাইতে স্থপবিত্র, প্রেমের জ্বলন্ত চিত্র,
আসিয়াছ ধরণী উপরি।
‘মহৎ হৃদয় যার, সেই আকর্ষণে তার,
জগৎ তাহারে ভালবাসে;
এ প্রেম প্রেমই নয়, এ যে শুধু স্বার্থময়,
এতে কার কিবা যায় আসে?
যে পাপী সত্তাপী জনে, দিতে পারে প্রেমধনে,
জগতে তুলনা নাহি তার।’-
তোমারি এ কথাগুলি,- কবির অপূর্ব তুলি’,-
-সমুজ্জ্বল হৃদয় তোমার।
ধন্য তব ও প্রণয়, ধন্য তব ও হৃদয়,
ধন্য তিনি বরিয়াছ যাঁরে;
কিন্তু এই দুঃখ মনে, পারিল না এ ভুবনে,-
চিনিবারে সে জনো তোমারে।
তোমার তো ক্ষতি নাই তাতে;
তুমি আপনার মনে, ঢাল প্রেম সযতনে,
চাহ না তো প্রতিদান পেতে।
নাথপাশে জ্বলন্ত চিতায়;-
নিজ নিয়তির শেষে, অবহেলে হেসে হেসে,
আজি সতী চলিলে কোথায়?
বিধির লেখনী পূরাইতে-
জীবন্ত সৌন্দর্য্য রাশি, জ্বলন্ত চিতায় নাশি,
পতিসাথে হরিষিত চিতে,-
গেলে যথা স্বার্থ দ্বেষ নাই;
ধন্য তুমি মনোরমা! সুপবিত্রা, অনুপমা,
মাখিলেও ও চিতার ছাই-
সুদূরে পলায় পাপ, ঘুচে যায় শোক তাপ,
অপ্রেম অশাস্তি রবে নাই।
১৬ই ভাদ্র, ১৩০১৷