মৃত্যু

হায় কেন স্বার্থপর তোর ও পরাণ!
শুধুই গরলভরা, না দিস এক্‌টু ধরা,
দয়া মায়া কিছু নাই শুধু কি পাষাণ!

ভাল বাসা তোর হায়! বুঝি না ত কারে;
আহা দেখ্‌ কত শত, নরনারী অবিরত
জ্বলিতেছে তোর ও কঠিন ব্যবহারে।

যে তোর নিকট হ’তে র’তে চায় দূরে;
এমনি স্বভাব তোর, তারেই করিয়া জোর
লয়ে যাস্, বসিস্ তাহার বুক জুড়ে।

কাতরে যে জন সদা তোর কোল যাচে,
সুকরুণ সে আহ্বান, নাহি পারে তোর প্রাণ
গলাইতে,- তুই নাহি যাস্ তার কাছে।

জননীর কোল হতে নয়নের তারা
সন্তানে, তাহার হ’রে, লয়ে যাস্ অকাতরে,
আহা তারে করে যাস পাগলিনী পারা!

মরি! দেখ কত শত নবোঢ়া বালিকা;
না ফুটিতে সুখ আশা, না বুঝিতে ভালবাসা,
শুকায় তপনতাপে কোমল কলিকা।

নিরদয় স্বার্থপর নিঠুর মরণ;
অফুট কুসুম কলি, কি সুখ পাস্ রে দলি,
স্থাপিতে কোমল বুকে কঠিন চরণ-

একটুও দয়া কিরে হয় না পরাণে!
স্নেহ দয়া মায়াহীন, ও হৃদয় সুকঠিন,
গড়েছে বিধাতা বুঝি নিরেট পাষাণে।

কেহ সুখী নহে তিল তোর অত্যাচারে;
অবিচারী তোর ন্যায়, কোথাও না দেখা যায়,
তোরে নাহি চেনে হেন দেখি না ত কারে।

আবাল বনিতা বৃদ্ধ তোরে করে ভয়;
কখন্ কাহার ঘরে, প্রবেশিয়া নিস্ হরে-
কোন্ ধনে,- সদা সবে সশঙ্কিত রয়।

কত পতি, সতী, কত জনক জননী
হারাইয়া প্রাণধনে, বিষণ্ণ সত্তপ্ত মনে
যাপে দিন, আঁখিজলে তিতায়ে অবনী।

হায়! কত দুগ্ধপোষ্য শিশু প্রতিদিন;
নিরমম ব্যবহারে,- তোর, ও শমন! হারে,
হতেছে অনাথ আহা পিতা মাতাহীন!

কত শিশু প্রতিদিন মার কোল হতে
না ফুটিতে মরি মরি! পড়িতেছে ঝরি ঝরি,
-শমন সবারি তুই বিঘ্ন সুখপথে।

নাই হেন গৃহ এই জগতমাঝার;
পূরাইতে মনোরথ, যথায় পাস্‌নি পথ,
ছারখার করিনি সুখের সংসার।

২৭শে ভাদ্র, ১৩০১।