তোমার শান্তির কোলে এসেছি জননি গো!
চাহিতে এক্টুখানি স্থান;
(তব) অসংখ্য সন্তান সাথে আমিও এসেছি আজি,
পাইতে স্নেহের কণা দান।
(হেথা) নিভৃতে নিশ্চিন্তে রহি, করিব বাসনা মনে,
জীবনের দিন অবসান;
ক্ষুদ্রতার সীমা কাটি’, অনন্তের সাথে মোর
বিলীন করিয়া দিব প্ৰাণ।
আসিবে না এতদূরে ভাসিয়া আর সে ক্রুর
সংসারের বিষময় বায়;
সিন্ধু ব্যবধান মাঝে; ও পারের কোলাহল
কাণে আর শোণা নাহি যায়।
কিসের মমতা? হায়! আছে কিগো সংসারের!
কোনখানে এক্টু হৃদয়?
জীবের শোণিতপায়ী রাক্ষসী-প্রতিমা সে তো;
পরাণ তাহার স্বার্থময়।
ছলে বলে সকলের সর্ববস্ব হরণ করা,
এই শুধু উদ্দেশ্য তাহার;
প্রশমিত কোন কালে কভু নহে হইবার,
বহ্নি সে দারুণ আকাঙ্ক্ষার!
‘দাও দাও’ সদা তার শুধু এই কথা মুখে,
এক তিল নাহিক বিরাম;
বলি না এমন কথা, কখনো সে নাহি দেয়
গ্রহণ করিয়া প্রতিদান।-
মথিয়া জীবন-সিন্ধু, গ্রহণ করিয়া সুধা,
পরিপূর্ণ করে হলাহলে;
দেবতা-মন্দির ভাঙি’, গড়ে সে শ্মশান, নিজ
বিলাস-প্রাসাদ কুতূহলে!
ক্ষেত্রের উর্বরা নাশি’, কঠিন নীরস বক্ষ-
মরুভূমে, করে পরিণত;
ঘোর অত্যাচারে তার, জীবের হৃদয় হ’তে
নির্বাসিত সুপ্রবৃত্তি যত।
অভাব, অশান্তি, শুধু, মেলিয়া সহস্ৰ জিহ্বা,
মানবেরে সদা গ্রাস করে;
নরক কোথায় আর? নিত্য অভিনয় তার
হইতেছে চক্ষের উপরে!
নির্দয় পাষাণী সেই, কি কুহক-মন্ত্র-বলে,
সৃষ্টি নাশ করে বিধাতার!
পড়িলে বারেক ধরা, নিষ্কৃতি নাহিক ত্বরা,
ভীষণ কবল হ’তে তার।
দুর্লভ মানব হেন, তার প্রলোভন-ফাঁদে
স্খলিত হয়নি যার পদ;
এক্টী দিনেরো তরে, সকলেরি, তার কাছে
লিখে দিতে হয় দাস্য-খত।
(তবে) ত্বরায় সে লভে মুক্তি, সংগ্রামে জিনিয়া তারে,
আছে যার হৃদয়ের বল,
নহিলে দাসত্ব চির, জীবের জনম ধরি’
ললাটের লিখন কেবল!
(আজি) ফেলেছি ভাঙিয়া আমি, শত জনমের মম
অধীনতা-শৃঙ্খলের ভার;
আজি আর নিয়ামক প্রভু নহে সে আমার,
আজি আমি দাস নহি তার!
পেয়েছি ফিরিয়া আজি, হারাণো সে স্বাধীনতা,
উদার বিমুক্ত বুকে তব!
আজিকে তোমার ক্রোড়ে, অনন্ত বিশ্বের মাঝে,
জন্মিমু জীবনে অভিনব!
(তব) যথা রবি, শশী, তারা, কুসুম, সলিল, তরু,
(এবে) আমিও তাদেরি একজন;
হইব তাদেরি মত নিখিলের আপনার,
করি’ ব্রত নিস্কাম সাধন!
১৩০৩।