নক্ষত্র

কে তোমরা বল গো আমায়!
জানিতে পরাণ সদা চায়।
অনন্ত নীলিমা মাঝে অসংখ্য হীরক কণা
যেন শোভা পায়।

দিবসে কাহার ভয়ে থাক সবে লুকাইয়ে,
রজনীতে দরশন দাও।
তোমরা কি স্বর্গের প্রদীপ?
তাই বুঝি সন্ধ্যাকালে স্বরগনিবাসী যত,
ঘরে ঘরে জ্বালে সন্ধ্যাদীপ।

অথবা, আছে কি হোথা রতনের খনি?
নিবিড় রজনী কোলে তাই বুঝি জ্বলে হোথা,
শত শত মরকত মণি।

তোমরা কি দক্ষস্থতা, দারা চন্দ্রমার?
নিত্য তাই পতি সহ, প্রশান্ত শয্যার তলে
সতীর মাহাত্ম্য বুঝি করহ প্রচার?
শুনেছি স্বরগে আছে রমণীয় স্থান,
দেবেন্দ্র কামিনী যথা, বিহার করেন সদা,
নন্দনকানন সেই স্বরগ-উদ্যান;
আছে নাকি তথ্য দেবের দুর্লভ ধন;
পারিজাত ফুল, যাহা যতনে গাঁথিয়া মালা,
দেবরাণী শচী, কণ্ঠে করেন ধারণ।

তোমরা কি পারিজাত আছ অমরায়?
অনন্ত নীলিমা মাঝে, ঐ ত্রিদিবের কাছে,
সুদূরে- অতি দূরে- অতি দূরে দেখা যায়।
অথবা পুণ্যাত্মাগণ সুকৃতির ফলে,
লভিয়াছ উর্দ্ধদেশ, করহ প্রচার ভাই-
ধর্ম্মের মাহাত্ম্য বুঝি ধরণীমণ্ডলে।

বলেন বিজ্ঞান্‌বিদ, শুধু গ্রহচয়।
সূর্য্যকেন্দ্র পানে সবে চলিয়াছ তীরবেগে,
পৃথিবীও গ্রহ ছাড়া আর কিছু নয়।

এইরূপে কত জন কত কথা বলে।
আমি কিন্তু সত্যতত্ত্ব ভাবিয়া না পাই কিছু,
কে তোমরা দেখা দাও আসি নিশাকালে?
নীরব নিশীথে যবে স্তব্ধ চারিধার,
তখন আকাশ তলে, অসংখ্য তারকা জ্বলে,
কি শোভা দেখিতে আহা কিবা চমৎকার!
ধন্য পরমেশ তাঁর মহিমা অপার!
সৃজিত যাঁহার এই, অপার রহস্যময়ী,
প্রণিপাত করি আমি তাঁরে বার বার।

১৩০০; শ্রাবণ