১৮৯৯ সালের কংগ্রেস সভাপতি,
মাননীয় শ্রীযুক্ত রমেশ্চন্দ্র দত্ত, সি, আই, ই, মহোদয়ের প্রতি।
(১)
তোমারে করিতে অভ্যর্থনা, হেথা আমি আসিয়াছি
আজি, ধর এ ভগ্নীর ক্ষুদ্র স্নেহডোরে গাঁথা, এই মালা গাছি।
(২)
যাঁহার স্বদেশগত প্রাণ, যোগ্য যে সন্তান জননীর,
শুনিতে সরম বাজে ধার, ধ্বনি, নিজ যশ দুন্দুভির,
প্রকৃত পৌরুষ রাশি ভরা, উচ্চ লক্ষ্যে দৃষ্টি অবিচল,
ওই লক্ষ তারকার মাঝে তুমি সেই চন্দ্র সমুজ্জ্বল।
(৩)
কত ক্লান্তি হীন দিবা গিয়াছে চলিয়া, নিদ্রাহীন রাতি,
হয়নি নিমেষ তরে ম্লান, বীর হৃদে উৎসাহের ভাতি!
করিবারে প্রতিষ্ঠিত পুনঃ, ভারতের পূর্ব্ব যশোরাশি,
সম্মানিত করিতে তাহারে, নিকটে সকল বিশ্ববাসী।
(৪)
মাতৃভক্ত সন্তানের কাণে, মাতৃনিন্দা অতি ক্ষুরধার,
সে মাতা যখন হায়, পুনঃ, সৰ্ব্বগুণ সৌন্দর্য্য আধার।
রহিয়াছি আমরা মায়ের, শত শত অকৃতী সন্তান,
আমাদের মনে নাহি বাজে, ঘৃণা, অবহেলা, অপমান।
সহস্র বর্ষের নাগপাশে, মোরা সবে হয়েছি পাষাণ!
জড়ত্ব এ ভেদিয়া সহজে, অঙ্কুরিত নাহি হয় প্ৰাণ!
কিন্তু যুগ বর্ষের উদ্যমে, যবে এক জনমে অঙ্কুর,
জড়েরো হৃদয় দেশে যেন, বেজে উঠে আনন্দের সুর।
(৫)
অসম্পন্ন সাধ যবে সহস্রজনের, সাধে একজন,
অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা ভরে, পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে মন।
লহ তুমি কৃতজ্ঞতা সেই, তব নিজ স্বদেশ বাসীর।
পেয়েছ অত্যুচ্চ স্থান তুমি, কবি সিংহাসনে বিদেশীর।
(৬)
আনন্দ বিহ্বলময় হৃদে, বিভু পদে প্রার্থনা আমার,
দেন তোমা সুদীর্ঘ জীবন আশীবর্বাদ মণ্ডিত তাঁহার।
২৭ ডিসেম্বর, ১৮৯৯
১নং হ্যারিংটন ষ্ট্রীট,
কলিকাতা।
শ্রীমতী মৃণালিনী
**পুস্তক খানি মুদ্রিত হইয়া যাইবার পর উপরি উক্ত কবিতাটী রচিত হওয়ায় “শেষ” কবিতারও শেষে উহাকে স্থান প্রদান করিতে হইল। কবিতাটী, কংগ্রেস অধিবেশনের সময় লক্ষ্ণৌরে প্রেরিত হইয়াছিল।