“এখনো তারে চোখে দেখিনি,
শুধু বাঁশী শুনেছি।
মন প্রাণ যাহা ছিল দিয়ে ফেলেছি।”
রবীন্দ্রনাথ।
(১)
সখি! শুধাস্ না বার বার,
কি নাম আমার মনোদেবতার,
শুধাস্ না মোরে আর।
ইষ্টমন্ত্র কেহ কি কখনো
প্রকাশ করিয়া বলে?
জান না কি সখি! কাম্য বস্তু
বলিলে আর না ফলে।
মনে মনে তাহা জপিবার শুধু,
জপি আমি সারাদিন;
মরমের মাঝে প্রকাশিত তাহা,
মরমের মাঝে লীন।
সে নামে কত যে অমিয়া মাখানো,
সখি লো! বলিব কি!
আস্বাদে তার, চিরতরে আমি
অমর হইয়াছি!
(২)
সখি! কেমন সে রূপ তার!
চৰ্ম্ম-চক্ষে হেরিনি আজিও
ধ্যানে শুধু ধারণার;
হেসো না, পাগল ভাবিও না মনে,
কি বুঝিবি তোরা সই!
এ কেমনতর ভালবাসা মম?
-আপনি অবাক্ হই!
(৩)
সখি! ভুলালে কেমন করে!
সে কথা স্মরিতে আগাগোড়া সব,
ভুলে যাই একেবারে!
স্বরগে মরতে রহে সে কোথায়?
আজিও তা নহি জ্ঞাত;
অলক্ষ্যে রহি বাঁশরী বাজায়ে
করে শুধু উন্মাদ!
শুধাইয়া ছিলু উদ্দেশে তারে,
একদা আকুল প্রাণে;-
“কে তুমি দেবতা? দাসীরে তৃপ্ত
কর পরিচয় দানে।
বাঁশরীতে তার এল উত্তর,
জানাইয়া নিজ নাম,
কহিল সে মোরে;- কি ক’ব স্বজনি!
হরষে বিভল প্রাণ-
এখনো আমার সে কথা স্মরিতে;
কহিল,- “তোমারি আমি!
“রেখো মনে চির-দাসেরে তোমার,
“অয়ি হৃদয়ের রাণি!”
কি পরশমণি ছিল তার কাছে!
রাশি রাশি ধন মোর,
আপনার করি লইল সে ক্রমে,
করিয়া ভিখারী ঘোর!
তবুও স্বজনি! অতুলন সুখে
জীবন পূর্ণ মম;
সুখ নাহি আর এর চেয়ে কিছু,
আপনারে দান সম!
১৩০৪। আষাঢ়।