অনন্তকালের পরিচয়

মানবসন্তান বলে ভাবি না তোমায়,
আমি বুঝি দেবতা বলিয়া;
স্বরগ সুষমামাখা ও হৃদয় তব,
সাধ মোর দেখিতে তলিয়া।

প্রাণ দিয়া পূরাইতে অভাব তোমার-
বড় সাধ হয় মোর চিতে,
কিন্তু আমি কোথা পাব সে অমূল্য নিধি,
তুমি যাহা চাহ গো পাইতে।

সামান্যা বালিকা আমি, আছে মোর যাহা,-
ক্ষুদ্র হৃদি ক্ষুদ্র প্রাণ মন;
তাই আমি দিছি তোমা, লও বা না লও,-
কর কিম্বা না কর যতন।

এ ধরায় যদি কেহ না বুঝে তোমায়,
দেয় তব হৃদয়ে আঘাত;
নাহি পাও স্নেহ কোথা, আমি স্নেহ দিব,
আমি দিব বাড়াইয়া হাত।

ঢাকিয়া রাখিব তোমা এ হৃদয় দিয়া,
নাহি দিব পরশ করিতে-
পবিত্র ও দেহে তব বিষাদ বাতাস;
প্রেমানন্দ রবে চারি ভিতে।

সমস্ত জগৎ যদি বিরুদ্ধে তোমার
মাথা তুলে উঠিয়া দাঁড়ায়-
আমি বুক পেতে দিব জননীর মত,-
-অন্তরাল করিয়া তোমায়।

অবজ্ঞা তাচ্ছিল্য যদি পাই তব কাছে,
হাসি মুখে সহিব সকলি;
হে দেবতা- জানি আমি তোমার নিকটে-
এক কণা বালুকা কেবলি।

প্রশান্ত সাগর তুমি প্রেমপারাবার,
চলিয়াছ অনন্তের সাথে;
তীরে আমি বালুকণা, তৃষিত নয়ানে
চেয়ে আছি তোমাতে মিশাতে।

বিশ্বরূপী সৌন্দর্য্যের উপাসনা তব,
তুমি মম উপাস্থ দেবতা;
তোমাতে দেখিছি বিশ্ব, পাঠ করিয়াছি-
প্রকৃতির রহস্য বারতা।

স্বপনের মত যেন অতীত কাহিনী
ছায়া সম হতেছে স্মরণ;
মনে পড়ে তুমি মোর চির জনমের
পরিচিত আপনার জন।

কত যুগ জন্মান্তর হয়েছে অতীত
সেই এক প্রভাত আলোকে;
পথে বাহিরিলে তুমি সকলের সাথে,
প্রেমময় হৃদয়ে পুলকে।

আমিও তোমার পিছে চলিনু নীরবে,
বায়েক চাহিলে মোর পানে;
পড়িতে কি পেরেছিলে কি যে লেখা ছিল-
আমার সে আনত নয়ানে?

আপনার প্রেমে তুমি আপনি বিভোর,
তোমার ও প্রেমিক হৃদয়;
দেখিত সুন্দর সবি প্রেমে মাখামাখি,
বিশ্ব শুধু সৌন্দর্য্য নিলয়।

সে সৌন্দর্য্য ধরিবারে পাগলের মত
বাহিরিলে একদা প্রভাতে;
কোমল কুসুম পথ দেখিলে সম্মুখে,
দেখিলে অনেক সখা সাথে।

ফুলে যে কণ্টক আছে, জানিতে না তাহা;
জানিতে না তোমায় ফেলিয়া-
যাহারা প্রাণের প্রিয়, হৃদয়ের সখা
যেতে পারে তাহারা চলিয়া।

বুঝিলে তা এক দিন, দেখিলে চাহিয়া-
যারা ছিল কেহ তারা নাই;
দাঁড়াইয়া আমি শুধু পারশে তোমার,
তোমারি আশার গান গাই।

হাত খানি ধীরে ধীরে দিলে বাড়াইয়া,
বক্ষে আমি করিনু ধারণ;
চুম্বিলাম শত বার, রাখিলাম শিরে,
প্রেমাশ্রুতে ধুয়ানু চরণ।

কহিনু তোমারি আমি, তুমি যথা যাবে
তথা যাব ছায়ার মতন;
সকলে ত্যজিয়া তোমা যাউক চলিয়া,
আমি না ত্যজিব কদাচন।

চলিলে কত না পথ ধরিয়া এ হাত,
কত বৰ্ষ যুগ গেল চলে;
কবে হোলো ছাড়াছাড়ি ভুলে গেছি তাহা,
আজ পুন কোথা হতে এলে!

পেয়েছ সন্ধান কি গো, চির জনমের-
তোমার সে সাধনার ধন?
অথবা এখনো তুমি ফিরিছ খুঁজিয়া-
দিশাহারা খ্যাপার মতন?

আমিও পাগল আজি হারায়ে তোমায়,
সহস্র বাঁধন গেছে টুটে;
শত বাহু বাড়াইয়া এ হৃদয় মোর
কাহারে ধরিতে চায় ছুটে।

আমি এই বুঝিয়াছি প্রেম শুধু সার,
এ জগৎ শুধু প্রেমময়;
প্রেমডোরে বাঁধা বিশ্ব প্রেমে মাখামাখি,
প্রেম ছাড়া আর কিছু নয়।

তাই মনে করিয়াছি পরাণ ঢালিয়া-
শিখিব করিতে প্রেম সবে;
অনন্ত শকতিময় সৌন্দর্য্যসাগর,
প্রেমের ঈশ্বরে পাব তবে।