পত্র

শ্রীমতী মনোরমা। অগ্রজা সহোদরা ভগিনী
শ্রীচরণ কমলেষু।

দিদি! তুমি আমায় কি গো!
ভুলে গেছ একেবারে;
চিঠিপত্র পাই না আর,
মন্‌টা বড় আকুল করে।

আর কি এখন আছে মোর-
স্নেহ ছাড়া তোমাদের,
দিও তাই একটী কণা,
আমার সেই হবে ঢের।

তোমরা যদি ভুলে যাও
এ অভাগী বোন্‌টীরে,
শুক্ল প্রাণে, কিসের আশে
সাঁতার দেব অগাধ নীরে।

তোমাদেরি একটী কণা,
স্নেহসুধা পান করে-
এখনও আমি বেঁচে আছি
এ মর ধরণীপরে।

(নইলে), বনের মাঝে যে ফুলটী
ফুটেছিল অন্ধকারে-
ধীর বাতাসে গন্ধ যার
নিয়ে যেভ চারি ধারে;-

বনের কোলে অন্ধকারেই
নীরবে সে যেত ঝরে;
শুন্‌ত না কেউ, জান্‌ত না কেউ,
মুছত না চোখ ‘আহা’ করে।

এ জগতে তার কারণে
কিছু কার হত না ক্ষতি
মা বাপ আর তোমার বুক
একটু খালি হত- ‘ যদি।

জানি আমি চিরকালই-
তুমি আমায় বাসো ভালো,
তুমি আমায় বরাবরই-
পরাণ পূরে স্নেহ ঢালো।

এখনও তাই দেখ্‌তে পাও
আমায় এ ধরণী মাঝ,
তাই এখনও মনে করি
আছে দেরি আস্‌তে সাঁঝ।

কারো জীবনে না ফুরাতে-
সকাল বেলার ছেলেখেলা,
আচম্বিতে ঘনায়ে আসে
নিবিড় ঘোর সন্ধ্যেবেলা।

ঠিক দুপরে আমোদে মেতে
নিশ্চিন্ত রয়েছে কেউ,
কোথা হতে নেমে আসে
সন্ধ্যার আঁধার ঢেউ।

আমার সন্ধ্যে, আস্‌বে কখন
আমি প্রায়ই ভাবি রোজ,
পড়ে আছি এক্‌টী ধারে
কেউ ত কই নেয় না খোঁজ।

জলবিম্ব জলেই মিশুক
সকল ল্যাঠাই যাবে ঘুচে,
তোমাদের ও হৃদয় হতে-
স্মৃতিও শেষে যাবে মুছে।

এত কাল এ বুকে মোর
ঢেলেছ যে স্নেহধারা,
যে অমৃত পান করে-
এখনও আমি পাগল পারা।

যে আস্বাদ পেয়েছি তা
কখনো কি ভোলা যায়,
অভাগী তোমার কাছে
তাই এখনও স্নেহ চায়।

রয়েছি য’ দিন হেথা
ভুলো না ভুলো না তারে,
রেখো স্থান এক্‌ টুকু
হৃদয়ের এক ধারে।

আর কিছু ত এ অভাগী
চায় না দিদি তোমার কাছে,
ভয় শুধু এই মনে তার
আছে যা হারায় পাছে।

তবে আসি আজকের মত,
চিঠির আশায় রইনু চেয়ে
দেরি কোরো না, লিখো চিঠি,
আমার এ চিঠিটা পেয়ে।

১১ই আশ্বিন, ১৩০১।