(অনুবাদ।)
(১)
যদিও রে শিশু! তুমি
অন্যের নয়নমণি;
একবার তবু ওরে ডাক্ মোরে মা বলিয়া!
কচি মুখখানি তোর,
চাহনি ও মনোহর
হেরিয়া, মায়ের হৃদি উঠে মম উথলিয়া!
তোমারে রাখিয়া ঘরে,
খাটিতে জীবিকা তরে,
গেছে চলি’ বহুদূরে, নিজের সে মা তোমার!
সমবয়সীর সাথে,
ওই তরুতলে মাঠে,
খেলিছে, চাহিয়া দেখ্, দিদি তোর আপনার
দুখিনীর হিয়া মম,
তিয়াসায় তৃপ্তি সম
কি সুখ, কি শান্তি ঘন, লভে তবে নিরবধি।
-একটী ঘটিকা শুধু মা তোমার হই যদি!
(২)
বহুদূরদেশ হ’তে
এসেছি সমুদ্রপথে;
ফেলিয়া এসেছি সেথা একটী শিশুরে আমি;
সুদূর সে অতিদূর;
কত দেশ ও সিন্ধুর
ব্যবধান হেথা হ’তে সংখ্যা তার নাহি জানি।
আয় বাছা! কাছে মোর;
আমি অরি নই তোর;
ওই কচি তমুখানি আমি বড় ভালবাসি;
নই রে অপরিচিতা,
ভুলে গেলি এখনি তা?
কাল তোর মার সনে সেই যে কুটীরে আসি’
তোরে লয়েছিনু বুকে;
চুমেছিমু চাঁদ-মুখে;
খেলানা গড়িয়া, তোর দিয়াছিনু কচি হাতে;
আহা! কি সুন্দর তুই!
কাননে গোলাপ যুঁই
শত শত আছে ফুটি’;- তুলনা কি তোর সাথে?
(৩)
আয় বাছা! মিলি হয়ে,
এইখানে থাকি শুয়ে;
তুই যেন শিশু মোর, আমি যেন মা তোমার।
আমারি বুকের ধন
রো’স তুই অনুক্ষণ;
করিস্নে ভয়; তোর আমিও যে আপনার!
তুই মোর,- তুই মোর;
-মিছা এ নয়ন-লোর-
বহিছে আমার;- তোর হ’বে নাকো অকুশল।
যে দিন ত্যজিয়া গেহ,
ত্যজি’ দয়া, মায়া, স্নেহ,
এসেছিনু চলে,- হায়! বিদায়ের অশ্রুজল
শিশুরে করিয়া কোলে
ফেলেছিনু অবিরলে!
সখী মম নিরখিয়া বাধা দিয়েছিল তায়;
“শিশুরে কোলেতে রাখি’
“বর্ষিতে দিওনা আঁখি;
“শুভ কভু নহে ইহা” বলেছিল সে আমায়,
-না, না, কিছু নাই সত্য; কভু তার এ কথায়।
(৪)
আমার বিরহে, মম
সন্তান সে প্রিয়তম
অবিরত দীর্ঘশ্বাস ফেলিবে, কাঁদিবে আর।
জানি না কি শেষ কালে
তাই আছে এ কপালে?
-হারাবে হারাবে প্রাণ শৈশবেই সে আমার!
সে আমার দিন দিন
হইয়া যেতেছে ক্ষীণ;
কখন্ পড়িবে ডাক্;- তারা বুঝি ভাবে তাই?
আহা! তার, তোরি মত
ছিল হাসি মধু কত!
প্রফুল্ল অধরপুট,- তোরি মত পুষ্ট কায়।
চতুরতা, চপলতা,
চাহনিও, – কিছু কোথা
ভিন্ন ভেদ নাই যেন, তোমাতে, তাহাতে আর।
আহা! যদি ভগবান্
রাখেন তাহার প্রাণ,
হেরিব নয়নে আমি সে বয়ান পুনর্ব্বার!
(৫)
সুকুমার শিশু ওরে!
আমি দেখিতেছি তোরে
আশা, হর্ষ, সন্তোষের ছবি,- মাতৃহিয়া মাঝে!
তুমি কাহার না প্রিয়?
তোর তরে প্রকৃতিও
অসীম মাধুরী যেন বিছাইয়া রাখিয়াছে!
আমার সে প্রাণাধিক,
তুই তারি চিত্র ঠিক;
তারি সুমধুর নামে তোরেও ডাকিব সদা।
দীর্ঘ প্রবাসের পরে,
ফিরে যবে যাব ঘরে,
কহিব তাহারে তোর কত গল্প, কত কথা!
Wordsworth. ১৩০৫।