সেমন্তী

(শ্রীমতী স্বর্ণকুমারী ভগিনীপ্রণীত বিদ্রোহ উপন্যাস।)

(১)
প্রেম জানে পুরুষে কি কভু নারীর মতন?
একটুকু বাধা পেলে, হায়!
পুরুষের প্রেম ভেঙ্গে যায়;
তাহাদের শুধু ছেলেখেলা প্রণয়-রতন৷
কখনো স্বরগে তারা তোলে,
কখনো পাতালে দেয় ফেলে;
সাগরের তরঙ্গের মত তাহাদের মন৷
তারা শুধু মধু ভালবাসে,
ফিরিয়া না দেখে মধুশেষে;
পুরাতনে ফিরে নাহি চায়,- পাইলে নূতন।
সেমন্তি! তুমিই সাক্ষী তার,
দেখ আজি কি দশা তোমার!
কোথা আজি ভালবাসা, সেই আদর যতন?

(২)
এক দিন কত না সোহাগ,-
কত না মধুর অনুরাগ
ঢেলেছিল ও হৃদয়ে; বৃন্ত হ’তে ছিন্ন করি-
দেখেছিল সুখে প্রাণ খুলি;
পরেছিল কণ্ঠোপরি তুলি,-
রেখেছিল সযতনে সাদরে হৃদয়ে ধরি।
কোথা আজি সে মধু আদর?
কেন অশ্রু ঝরে ঝর ঝর?
কেন আজি ম্লানমুখে লুটাও ধরণী পরি?
হাসি লয়ে, সৌরভ হারিয়ে,
অকাতরে সে গেল চলিয়ে,-
কঠিন পাষাণ প্রাণে চরণে দলিত করি।
সে যে গেল ত্যজিয়া তোমায়,
তুমি কেন ভোলোনি তাহায়?
তুমি কেন ভালবাস আজো তারে প্রাণভরি?

(৩)
হৃদয়মন্দির মাঝে, তার
মূরতি গঠিয়া কেন আর
এখনো দেবতা ভাবি, নিশিদিন পূজা কর?-
যে তোমারে নাহি চাহে আর,
ফিরিয়া না দেখে এক বার;
সেমন্তী তুমিই ধন্য! তার দোষ নাহি ধর।

(8)
পুন তার সুখের লাগিয়ে,
নিজ হৃদি বলিদান দিয়ে,
উদ্যত আপন ধনে সঁপিতে পরের করে।
এরি নাম রমণী-প্রণয়,
এত দৃঢ় রমণী-হৃদয়!
শত বাজে ভাঙ্গিলেও বুক, প্রেম নাহি ঝরে।
নিঠুর হোক্‌ না কেন পতি,
প্রেমিকা যে পতিরতা সতী,
পারে সেই প্রাণেশের জীবন রক্ষার তরে
অকাতরে দিতে নিজ প্ৰাণ;-
পতিব্রতা রমণী সমান
এমন মাহাত্ম্য আর ধরণী কাহার ধরে?

১৫ই ভাদ্র, ১৩০১৷