স্বার্থ ও নিঃস্বার্থ

অর্থহীন কথা।

“নিষ্কাম নিঃস্বার্থ ভাব”, বোলো না কো আর-
অপার্থিব কথাগুলা। হ’য়েছে বিলীন
রঞ্জি’ নেত্রে অঞ্জনের রেখা কল্পনার
কবিতার স্বপ্ন-রাজ্যে ভ্রমণের দিন।
লভিয়াছি আমি এবে নিৰ্ম্মম চেতন;
চিনিয়াছি কারে বলে সত্য আর ভুল;
বাস্তব রাজ্যের এবে আমি একজন;
জীবন-তরীর মুখে সংসারের কূল।

“নিষ্কাম নিঃস্বার্থ ভাব”, অর্থহীন কথা
সংসারের অভিধানে রয়েছে নিহিত।
“মস্তকহীনের হায়! মস্তকের ব্যথা”!
প্রলাপ শুধুই ইহা, অতি অবিহিত।
স্বার্থ হ’তে দিলে বাদ জগত সংসার,
এক মুটা ভস্ম শুধু বাকি থাকে সার!

বিনিময়।

এ ভবের হাটে মোরা ব্যাপারী সবাই;
সকলেরি আছে নিজ স্বার্থের সম্বল।
পরস্পর বিনিময় করিয়া তাহাই,
কেহ লাভ করি, কারো ক্ষতিই কেবল।
ভক্তি, স্নেহ, দয়া, পুণ্য, বন্ধুত্ব, প্রণয়,
স্বার্থশূন্য নহে কিছু; হউক না যত
পবিত্র, বিস্তৃত, গাঢ়, মধুরতাময়।

বল দেখি সত্য কথা, আমার শপথ;
বন্ধু তুমি। আমি যদি তব নাহি দিয়া
বন্ধুত্বের প্রতিদান, ভুলি’ উপকার
অবিশ্বাস-ছুরী দিই বুকে বসাইয়া;
হউক হৃদয় তব সহস্র উদার,
বাজে নাকি মৰ্ম্মে ব্যথা তরে তিলেকের?
পাষাণের ধর্ম্ম কভু নহে মানবের!

সম্মান।

হে ধাৰ্ম্মিক! লইও না দোষ এ কথার,
“স্বার্থ চিরকাল ধরি’ ধর্ম্ম মানবের।”
স্বার্থ নহে হেয়, নহে কভু অবজ্ঞার,
স্বার্থ নহে একরূপ, কত রকমের!
ধৰ্ম্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ, মূলে সবাকারি
স্বার্থপরতার বীজ আছে বিদ্যমান।
‘আত্মসুখ চরিতার্থ’,- উদ্দেশে ইহারি
জ্ঞানী, মূর্খ, ধনী, দীন, ফেরে অবিরাম।

কাহারো সঙ্কীর্ণ দৃষ্টি;- শুধু প্রসারিত
সীমাবদ্ধ আমাদের এ মর ধরায়।
কারো বা বৃহৎ দৃষ্টি; মুক্ত, অবারিত
কাছে তার পরলোক-দ্বার। এই হায়!
ভেদ শুধু! বৃহতেরে করিতে সম্মান,
কল্পিত উপাধি, করা আমাদেরি দান!

১৩০৪। অগ্রহায়ণ।