সে যেন না পায় পরিত্রাণ

(১)
“কাপুরুষ, কৃতঘ্ন, পামর!”
জলহীন শুষ্ক দুনয়ন
ধক্‌ ধক্‌ উঠিল জ্বলিয়া।
গর্জ্জি’ ওঠে ফণিনী যেমন
কেহ তারে যাইলে দলিয়া,
বক্ষঃ নিজ সজোরে চাপিয়া
দুই হাতে, পাছে ভেঙে যায়
ছিন্ন ভিন্ন শতধা হইয়া
সে প্রচণ্ড মত্ত ঝটিকায়;
সহসা সে উঠিল কহিয়া,
“কাপুরুষ, কৃতঘ্ন, পামর।

সমস্ত জগত, যে নয়নে
ঢেকেছিল অন্ধকার-তলে,
পুনঃ তাহা হ’ল ক্ৰমে ক্ৰমে
উদ্ভাসিত, প্রতিহিংসানলে।

কল্পনার বিষপাত্র তার,
করাল কৃপাণ খরধার,
যত কিছু মৃত্যু-যন্ত্র আর,
রাখিল সে তুলিয়া এখন।
অন্তর ভেদিয়।, ওষ্ঠপুটে
“প্রতিশোধ” ধ্বনিল ভীষণ!

বিবর্ণ বয়ানে ক্রমে তার
স্বাভাবিক বর্ণ এল ফিরে;
তীব্র অভিশাপ-সুখে ভরা
ফুটিয়া উঠিল হাসি ধীরে।-
সে হাসির কি জান তোমরা
গোপন গভীর মৰ্ম্মবাণী!
সকল বিশ্বের রাজা সেই
জানেন কেবল অন্তর্যামী।

শয্যাতলে উঠিয়া বসিয়া,
জানু পাতি, যোড় করি কর,
করিল সে প্রাণময় স্বরে
গভীর প্রার্থনা, তার পর।
কহিল সে “হে আমার প্রভু!
“হে সবার প্রভু বিশ্বনাথ!
“তোমার নিকটে যদি কভু
“নাহি পিতা! থাকে পক্ষপাত,

“তুমি কর বিচার ইহার,
দোষীরে করহ দণ্ডদান;
জঘন্য হেয় এ প্রতারক,
“যেন নাহি পায় পরিত্রাণ!

“নরক-সন্তান হ’য়ে যেই
করেছিল দেবতার ভাণ,
ন্যায়-বিচারের কাছে তব,
সে যেন না পায় পরিত্রাণ!

“প্রাণ লয়ে পুত্তলিকা-ক্রীড়া!
বিশ্বাসের বোঝেনা যে দাম,
তোমার সত্যের দণ্ড হ’তে
সে যেন না পায় পরিত্রাণ!

“শত জন্ম পবিত্র স্নেহের
পায়নি যে জন আস্বাদন,
কপট সে ছলগ্রাহী, যেন
পরিত্রাণ পায় না কখন!

“নরকের বহ্নি, সদা তার
জ্বলুক্‌ প্রস্তর-হিয়া-মাঝে!
অশান্তি ও নিষ্ফলতা, যেন
বিরাজে তাহার সর্বব কাজে!”

(২)

“লীলা! লীলা! একি দেখি হায়!
কি হ’য়েছে বোনটা আমার?”
শুধাল সোৎসুকে উরমিলা,
আসিয়া নিকটে;- দিদি তার।

শুষ্ক চক্ষু ভরিয়া উঠিল;
প্রবাহ রুধিয়া প্রাণপণে,
প্রকৃতিস্থ করি আপনারে,
কহিল সে সহজ বচনে,
চাহিয়া বয়ান ভগিনীর;
“কিছুই এমন বেশী নয়;
অদৃষ্টের মেঘরাশি মম
পরিষ্কৃত আজি নিঃসংশয়!”

জ্যৈষ্ঠ। ১৩০৫ সাল।