শেষ

“Alas! this is not what I thought life was.”
Shelley.

গানগুলি রচনার শেষে আজ শুধু এই মনে হয়,
এরি সাথে জীবনো এ যদি পারিতাম সমাপ্ত করিতে।
কেন তাহা পারি না সাধিতে, প্রাণপণে যাচে যা হৃদয়?
মরণ মধুর যার কাছে সে কেন গো কুন্ঠিত মরিতে?
মরণ মধুর তার কাছে, কিন্তু কেন নহে সে সরল,
প্রত্যেক মুহূর্ত্ত যার কাছে কেবল বহিছে হলাহল?

পরিচিত প্রত্যক্ষ জীবন, কাঁদে প্রাণ অজ্ঞাতের তরে।
বক্ষ যেন ক্লিষ্ট অতিশয়, আত্মা যেন ‘বোঝা’ তার কাছে।
বৃথায় সান্ত্বনা-বাণী! কিছু সান্ত্বনার নাহি ধরা পরে।
তীক্ষ্ণ শ্লেষ সম উহা আরো অন্তরেতে নিদারুণ বাজে।
সমস্ত এ জীবনই যেন বা মনে হয় বিদ্রূপ দেবের;
মনে হয় যত শান্তি, সুখ গচ্ছিত গৃহেতে মরণের।

মৃত দেহ সমাধির স্থান, সেও কিবা স্নিগ্ধ শান্তিময়!
যাই যবে ভ্রমিবারে সেথা, আহা কি অপূৰ্ব্ব মহাভাবে
পরিপূর্ণ উচ্ছ্বসিত হ’য়ে ওঠে মম সমস্ত হৃদয়।
সেই খানে সান্ত্বনা-সঙ্গীত গীত চির নীরব আরাবে,
জীবন-সন্তপ্ত-জন শুধু পায় তাহা করিতে শ্রবণ।-
আহা সে কি প্রাণারাম স্থান! আহা সে কি সুখের ভবন!

চারিদিকে অগণ্য সমাধি, তরু, গুল্ম, পুষ্প আচ্ছাদিত,
তারি মাঝে অনন্ত শয়নে শায়িত অগণ্য নর দেহ।
হয় তে। জীবনে যাহাদের ছিল চির বৈরিতা সাধিত,
পাশাপাশি রচিত তাদের হেথা শেষ বিশ্রামের গেহ!
দেহের বিশ্রামাগার যদি এত শান্ত, এত মনোরম,
না জানি আত্মার তরে তবে নির্দেশিত সে রাজ্য কেমন!

১৩০৬। ভাদ্র। August, 1899.