আর কতদিন কাঁদিয়া কাটাবি?
দুখিনী মোদের মা!
এত ছেলে মেয়ে, আমরা কি সবে,
মানুষ হইব না?
বিফলে কি শুধু দিয়াছিলি ঠাঁই,
গর্ভে ও আপনার?
তোর সন্তান হ’য়ে, কি গলায়
গাঁথিব অযশ-হার?
তোমারি দত্ত এ দেহ জীবন,
বড় কি তোমার চেয়ে?
নাহি পারি দিতে, তোমার জন্য
একটীও ছেলে মেয়ে!
আপন বক্ষ নিঙাড়ি’ জননি!
পালিছ যে চিরদিন;
একটী বিন্দু শোণিত দিয়াও,
শোধিব না তার ঋণ?
“ধিক্! ধিক্! শত” জগত জুড়িয়া
সকলে মোদের বলে;
কেন না জননি! জনমমাত্রে
ডুবালি সাগরজলে?
তা’হলে তোমায়, “কাপুরুষ-মাতা”
শুনিতে হ’ত না বাণী;
হইতে হ’ত না ভিখারিণী আজি,
হইয়া রাজার রাণী!
কোথায় আজি সে সন্তুতি তোর?
জগতে অজেয় নাম!
অতীতের মহাকালের গর্ভে,-
করে তারা বিশ্রাম!
দেখিছে কি সেথা হইতে তাহারা,
তুলিয়া করুণ আঁখি?
তাদের সাধের জন্মভূমির
হীনতার নাই বাকি!
বরিষে কি তারা শিরে আমাদের
অভিশাপ নিদারুণ?
ঘরে ঘরে তাই উঠে হাহাকার,
লেগেছে ভীষণাগুন!
* * * *
এ দেখেও মোরা নিশ্চেষ্ট আছি,
অভাগা স্বদেশবাসী!
শুধু,- অদৃষ্টে গালি পাড়ি শতমুখে,
কাঁদি শুধু ঘরে বসি’!
“নয়নের জল চাহ যত ফোঁটা,
অনায়াসে দিতে পারি;
হতাশের গান, পারি, যদি বল
রচিবারে,- দুই চারি।
তা’তে যদি তব দুর্গতি দূর
না হয়,- নাচার তবে”।
জেনো মা জননি! সন্তান তব
এমনি অসার সবে।
বুক-ভরা ভয়, নির্বীর্য্য দেহ,
বিদ্বেষ-পোরা মন;
ভায়ে ভায়ে হায়! নাহিক যাহার
বিশ্বাসের বন্ধন;
সে জাতির কাছে, এর বেশি আর
কি আশা করিবে মা?
মিছে সন্তান আমরা তোমার,
-কোন কাজে লাগিনু না!
* * *
কে দিবে মোদের মৃত এ জীবনে
অমৃত ছিটাইয়া?
অনুপ্রাণিত করিবে মোদের,
আপনার প্রাণ দিয়া!
ভীরু আমাদের, কম্পিত কর
দৃঢ় করি ধরি বলে,
কৰ্ত্তব্য-পথে কে যা’বে লইয়া?
কে আছে ভূমণ্ডলে?
কেহ নাহি নেতা পথদর্শক,
সকলে আপনা বড়;
শত জনে বাধা দেয়,- একজন
হইলে অগ্রসর।
সকলেই হায়! বিভিন্ন পথ,
বিভিন্ন মত ল’য়ে,
করে কতরূপ গরিমা প্রকাশ,
নিজেরে শ্রেষ্ঠ ক’য়ে।
হায়! সে পন্থা কত যে জটিল,
ভঙ্গুর কত,- মত!
নিমেষে জনমে, নিমেষে মিলায়,
সলিল-বিশ্ববৎ!
১৩০৪। অগ্রহায়ণ।