স্বদেশের প্রতি

(কোনও প্রবাসীর উক্তি)

সুদূর এ পরবাসে
মনেতে কেবলি আসে
তোমার মধুর মুখ, স্বদেশ আমার!
যখন যেখানে থাকি
তোমারে মা বলে ডাকি’
উচ্ছ্বসিত হয় বুক আনন্দে অপার।-

“সুদূর!” সুদূর একি?
তোমারে যে সদা। দেখি
অস্তরের অন্তঃস্থলে রয়েছ জাগিয়া
ব্যবধান থাকে যদি
বন, সিন্ধু, গিরি, নদী,
প্রেম-সেতু সে দূরত্ব দেয় ঘুচাইয়া।

তোর মত মা আমার!
এত রূপ কার আর?
এত গুণ এক সঙ্গে কে পেয়েছে কবে?
তোমারে কে করে তুচ্ছ?
তুমি জগতের পূজ্য;
অকৃতী, তবু যে মোরা পূর্ণিত গৌরবে,

সে শুধু মা! তোরি তরে।
শত দোষ ক্ষমা ক’রে
তুমি যে দিয়েছ ঠাঁই অঙ্কে আপনার,-
আমাদের ভাবি হেয়
ফিরাবে যে মুখ কেহ,
জগতে এমন স্পর্দ্ধা আছে বল কার?

ধরণী তোমারি পোষ্য,
তোরি বুক-ভরা শস্য
আহার যোগায় নিত্য সর্বত্র তাহার;
স্বর্ণ, হীরা, মুক্তা, মণি
পরিপূর্ণ তোরি খনি,
তারি দীপ্তি-গর্বের অন্ধ বিদেশ-ভাণ্ডার।

তোরি দত্ত জ্ঞান-সুধা
মিটায়ে প্রাণের ক্ষুধা
পান করে মুমুক্ষু মানব-পরিবার;
-তুমি সদা দিতে থাক,
খালি যেন হয়নাক;
তোর হস্ত, অন্নপূর্ণা জননী আমার!

* * * *

এমন দেবীর গর্ভে
জনমি’ আমরা সর্বের
র’ব কি; র’ব কি চির-পৌরুষ-বিহীন?
শুধু কি তোমারি নামে
যশ কিনি’ ধরাধামে,
দুর্লভ এ জনমের ফুরাইবে দিন?

তোর যে এমন মান
যদি বিধাতার দান,
-তোরি গর্ভে জন্মেছিল সে সব বিধাতা!
সে কাহিনী অতীতের
কেনা জানে জগতের?
তুমি ধন্য ছিলে, হয়ে তাহাদের মাতা।

তাদের হাতের গড়া
সুখ-ভরা শান্তি-ভরা
এ গৃহ মোদের, মোরা ধন্য তাই সবে;
মোদের জননী বলি’
নব গর্বের সমুজ্জ্বলি’
নিজেরে আবার তুমি ধন্য কবে কবে?

১৩০৫।