পোহাইছে রাতি, পূরব গগনে,
পাখীরা গাইছে প্রভাতী গান৷
উজল চাঁদিমা হীন হয়ে আসে,
ক্রমেই লভিতেছে অবসান।
যত তারা গুলি, গিয়াছে নিবিয়া,
না দেখিতে পাই এক্টী আর।
এমন সময়ে, কে তুমি আসিলে,
শুকতারা বুঝি, দূত ঊষার!
যে দেশ হইতে, আসিয়াছ তুমি,
সেই রাজ্যে মোড় গেছেন স্বামী।
কও দূত শুনি, মঙ্গল বারতা,
শুনিতে উৎসুক রয়েছি আমি।
কেমন দেখিলে, দেবতারে মোর,
এ রাজ্যের স্মৃতি কি আছে মনে?
অভাগীর কথা, হৃদয়ে কি কভু
জাগরিত হয়;- ওঠে স্মরণে?
নিজ সমাচার, কিছু কি তোমারে,
বলেছেন, মোরে বলার তরে?
বল বল দূত, সমাচার তাঁর,
কেমন আছেন স্বরগ পরে।
দেববেশে যথা, দেবতা আমার,
কনক আসনে দেবতা মাঝে,-
শোভিছেন কিবা! নন্দনের ফুল,-
পারিজাতমালা গলায় সাজে৷
কিন্নর কিন্নরী, তাঁহার সম্মুখে;
গাহিছে নাচিছে অপ্সরা যত;
দেখিয়ে কি এলে, সে অতুল শোভা,
তাই কি মধুর হাসিছ এত!
দেবতালাঞ্ছিত সেই রূপরাশি,
ত্রিদিব উজল করেছে বুঝি;
তাই কি আমারে,
জানাইতে তুমি আসিলে আজি?
সার্থক তোমার নয়ন যুগল,
-অভাগী তথায় যাইতে নারে।
সে অতুল শোভা কেমনে দেখিব,
রয়েছি যে আমি সুদূর পারে।
যাইতেছ বুঝি? যাও তবে যাও,
দেবতা আমার আছেন যথা;
প্রণাম জানায়ো চরণে তাঁহার,
সুধাইও এই কয়টী কথা;-
“কভু এক তিল, না দেখিয়া যারে,
অধীর হইয়া আসিতে ছুটে;
না দেখে তাহারে, রয়েছ কেমনে,
সে যে তব আজি ধূলায় লুটে।
বলিও- “যাহার, অপরাধ কভু,
ধরিত না তব সরল হৃদি;
কোন্ অপরাথে ত্যজিলে তাহারে,-
ভুলে অপরাধ করেছি যদি।
বলিও – “ক্ষমিতে, হবে কি নিঠুর?
পাব না কি ক্ষমা নিকটে তাঁর?”
যে মরুর মাঝে, দাঁড়াইয়ে আছি,
দেখিতে পাব না তার কি পার?”
হৃদয়ের ভাষা দেখাতে নারি;
উথলে ততই যত নিবারি৷
* * * * * *
তবে যাও তারা, বোলো দেবতারে,
অভাগীর এই কয়টী কথা;
কি দেন উত্তর, শুনিয়া সত্বর,
বলিও আমারে আসিয়া হেথা৷
১লা শ্রাবণ, ১৩০১।