তুমি দেবি! বসন্ত আমার!

তুমি দেবি! বসন্ত আমার!
যখন করিয়া দয়া মনেতে কর এ দাসে,
কর যবে পদার্পণ ভাঙা এ হৃদয়াবাসে,
যত শুষ্ক ঝরা ফুল চারি দিকে ফুটে ওঠে,
পরিপূর্ণতম হয়ে ক্ষীণ নির্ঝরিণী ছোটে,
-অভাব থাকে না কোথা আর!

যাহা গাই তাই যেন অনন্ত ভাবেতে ভরা,
অবাক্ হইয়া শোনে সমস্ত নিখিল ধরা,
যশের ভাণ্ডার খুলে, রত্ন দেয় হাতে তুলে,
-তোমারেও ভুলে যাই হায়!

অবহেলা অনাদরে তুমি চলে যাও শেষে,
হৃদয়-কুটীর খানি করি ঘোর অন্ধকার!
মোহ ভেঙে গেলে পরে চাহি যবে তবোদ্দেশে,
-না পেয়ে সন্ধান, শুধু সার হয় হাহাকার!
-ডাকি শুধু কোথায়,- কোথায়?

যে ফুল ফুটিয়াছিল ঝরে পুনঃ পড়ে যায়,
সে উৎসের রসধারা শুকাইয়া মরে যায়!
ভুলে যাই, কি গাহিব- মনেতে আসে না আর,
কি গাহিব, ভুলে যাই ছন্দ, সুর, অর্থ তার!
কোলের উপরে লীনা, আর বাজাইনা বীণা,
কাঁদিয়া উঠিতে চাই, রোদন আসে না তাও।
আমার জীবনীশক্তি আমার সকল কিছু,
সবি যেন চলে যায় তোমারি, তোমারি পিছু;
-আমার দেবতা অয়ি! তুমি যবে চলে যাও!

“কোথা গো কোথায় তুমি জীবন-আনন্দ মম!”
ডাকে হিয়া অবিরাম প্রাণ ফাটা হাহাস্বরে।
অবশেষে ভরি ওঠে করুণায় তব মন
ফিরে আস তুমি রাণী, তোমার এ শূন্য ঘরে,
নব হর্ষ নব আলো লয়ে।
-তুচ্ছ যশ, মান, ধন, মরুভূমি এ জীবন
তুমি যবে না থাক হৃদয়ে।

১৯ ফাল্গুন। ১৩০৫।