হায় প্রভু! ভারতের প্রতি,
কেন তুমি নিকরুণ অতি?
তার তরে হৃদয়ে তোমার
নাই কি গো! স্নেহ এক রতি?
নয়নের অশ্রুবিন্দু তার,
এত সাধ দেখিতে তোমার?
বুক ভরি’ শ্মশানের ছাই-
ঢালিতেছ তাই অনিবার?
‘শস্য-শ্যামা রত্নপ্রসবিনী’,
‘জগতের সৌভাগ্যরূপিণী’,
‘চির-স্থির লক্ষ্মী, বীণাপাণি’,
নাম যার ছিল এতদিন;
মুষ্টিমেয় অন্ন তরে হায়!
সেই কি না কাঁদিয়া বেড়ায়!
জগতের দুয়ারে দুয়ারে,
আজি দীন ভিক্ষুক মলিন।
একদা সমস্ত বিশ্ববাসী,
দুয়ারে দাঁড়ালে যার আসি’,
ছিলনাকো সম্ভব কখনো-
রিক্ত করে ফিরিয়া যা’বার!
অক্ষয় ভাণ্ডার তারি আজ,
শূন্যতম; একি দুঃখ লাজ!
নাহি শক্তি, সন্তানেরো নিজ,
আজি ক্ষুধা তৃষা মিটাবার!
কি অমার্জ্জনীয় অপরাধ,
দেখিলে তাহার তুমি নাথ?
কেন এ শতঘ্নী ক্রোধ-বাণ-
উদ্যত, করিতে তারে নাশ?
যে দিকে নেহারি, হায়! শুধু,
প্রলয়ের বহ্নি জ্বলে ধূধূ!
বিস্তারি সহস্র ফণা, কাল-
সমগ্র ভারত করে গ্রাস!
কৃতান্তের যত অনুচর,
দুরভিক্ষে করি অগ্রসর,
একে একে ভারতের বুকে
স্থান নিজ করিছে স্থাপন।
“শান্তি কোথা হায়! ভগবান”?
কাতরে ডাকিছে কোটি প্রাণ,
সে দারুণ হাহাকার ধ্বনি
করিছ না তুমি কি শ্রবণ?
তুমি যদি না দিবে আশ্রয়,
কে তবে রাখিবে দয়াময়?
এইরূপে সৃষ্টি আপনার
নাশিতে কি করেছ মনন?
তাসম্ভব কিছু নাই তার!
ক্রীড়ার কন্দুক সদা যার-
কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড বিশাল;
সে কি করে মোদের গণন?
* * *
ধরণীর কত যুগ গত;
বিশাল সাম্রাজ্য শত শত,
কালে কালে উত্থিত, পতিত,
যথা জলবিম্বরাশি জলে!
ইতিহাস দুটী ছত্রে তার-
সমস্ত বিপুল গর্ববভার
বহে শুধু;- ভারতেরো নাম
হায়! কি মিশিবে সেই দলে?
১৩০৪ সাল।