ভিখারী

(অনুবাদ)

জ্বলন্ত অগ্নির চারি ভিতে
বসি’, এক হেমন্ত-নিশিতে,
কৃষকের পুত্র কন্যাগণ
চিন্তাহীন প্রফুল্লিত চিতে
রহস্যেতে ছিল নিমগন।

সহসা শ্রবণে তাহাদের
কুটীরের আবদ্ধ দ্বারের
মৃদু মৃদু পশিল আঘাত;
অতি ক্ষীণ করুণ স্বরের
সাথে,- এই সঙ্গীত-নিনাদ;

“জলীয় ভূমির ‘পর দিয়া
শীত বায়ু ফিরিছে বহিয়া।
-দারুন তুষার-পৃক্ত বায়!
সমুখে পর্ব্বত দাঁড়াইয়া।
-নাহি হেথা আশ্রয় কোথায়।

“বয়সেতে ক্ষীণ আঁখি-আলো,
পথ ঘাট চিনিনাকো ভালো।
“আর এই শত ছিন্ন বাস
বাঁচাইবে কতক্ষণ বলো,
-হ’তে ক্রূর হিমানীর গ্রাস?

“পারে না এ কম্পিত চরণ
দেহ আর করিতে বহন।
স্পন্দহীন, অসাড় হৃদয়।
গড়িতেছে সমাধি-শয়ন,
আমার;- তুষার কণা-চয়!

“আতিথ্য-বৎসল গৃহদ্বার,
হে গৃহস্থ! খোল গো তোমার।
-প্রচণ্ড বহিছে শীত বায়।
ত্ৰস্ত আমি, ক্লান্ত অতি আর,
জলাভূমি উত্তীর্ণ হওয়ায়।”

চলিল কৃষক দ্রুত, দ্বারে,
বসাইল অনলের ধারে,
আনি, শীতে অর্দ্ধ মৃতপ্ৰায়
দুর্বল সে ভিখারী জনারে,
বিবর্ণ বয়ান, কম্প্র কায়।

শিশুরা আসিয়া কাছে, তার
করদ্বয় শীতল- তুষার
লাগিল উত্তপ্ত করিবারে।
সত্বরে, গৃহিণী দয়াধার,
সুখাদ্য আনিয়া দিলা তারে।

হেরি দয়া, হ’লো পুলকিত,
ভিখারীর অবসন্ন চিত।
অশ্রুবিন্দু কৃতজ্ঞতার
বহিল, কপোলে বিকুঞ্চিত।
-সরিল না বাক্য মুখে আর।-

শিশুরা ফেলিল দীর্ঘশ্বাস।
থেমে গেল হাস্য পরিহাস।
অধিক আনন্দ অভিনব
(কারণ যদিও অপ্রকাশ)
করিল তাহারা অনুভব!-

Aikin, ১৩০৫।