ভগ্ন হৃদয়

না পাতিতে সংসারের খেলা,
দয়াময়! যদি ভেঙে দিলে;
না পড়িতে প্রাণেতে বাঁধন
মায়া-ডোর যদি গো ছিঁড়িলে;
না বুঝিতে জগতের গতি
“সব গতি” যদি পূরাইলে;
তবে কেন বুঝিনাকো হায়!
এখনও সংসারে রাখিলে!

(আজো) কি আশা রয়েছে সংসারেতে?
নিরাশা রয়েছে কিসেরি বা?
লক্ষ্যহীন জীবন-তরণী,
ঘুরে ঘুরে মরে নিশি দিবা!

কি মহান্ বাসনা তোমার
এখনো রয়েছে অপূরণ?
একা র’য়ে সহস্রের মাঝে,
কোন কার্য্য করিব সাধন?

কতটুকু রয়েছে ক্ষমতা?
অজয় হৃদয় আজো হায়!
সংসারের ঘায়ে সে এখনো,
শতধা হইতে যেন চায়!!

সংসার সে নির্মম নিষ্ঠুর!
আজি আমি কেহ নহি তার;
অবজ্ঞা-ভরা সে মুখ হেরি’
(তবে) প্রাণ কেন কাঁদে গো আমার?

চিতা-শয্যা সম্মুখে যাহার,
সে কি করে রবি-করে ভয়?
সংসারের শত বজ্রাঘাতে
ভাঙা বুক ভাঙিবার নয়!

তবুও কেন গো ভয়ে মরি?
আপনারে হয় অবিশ্বাস;
আজিও কি হৃদয়ের কোণে,
লুকানো রয়েছে কোন আশ?

আপনার জনকে যে হায়!
নারিল করিতে আপনার!
তার কি এখনো আছে সাধ,
পরকে আপন করিবার?

মনে আসে সুখ-স্বপ্ন প্ৰায়,
জীবনের সেই এক দিন!
সদ্যঃ-স্ফুট বাসনা-মুকুল,
হৃদয়ের উচ্ছ্বাস নবীন।

সে সব কাহিনী মনে হ’লে,
অবাক্ হইয়া আজি যাই;
“সত্য এ কি সেই আমি আছি”,
আপনারে আপনি শুধাই!

আমারি কি, আমারি কি হায়!
দীনহীন এ মলিন সাজ?
(কেন ছাই আসে চোখে জল?)
(মুছাবার কে আছে গো আজ?)

* * *

অতীতের সে সুখ-কাহিনী,
মনে আজ করি একবার;
এ কি তব নিয়ম প্রভু গো!
যায় যাহা, ফেরে না তা’ আর!

যে যে ভুল রহিয়া গিয়াছে,
সে সব শোধন করিবার,
পেতাম প্রয়াস প্রাণপণে;
আহা যদি হ’ত ফিরিবার!

হায়! এ কি ক্ষীণদৃষ্টি নর!
ভুল যবে থাকে বৰ্ত্তমান,
(সত্যের মোহন ছদ্মবেশে;)
পায় নাকো তখন সন্ধান!

তার পর জনম ধরিয়া,
চিরদিন শুধু হাহাকার!
বৃথা শোক অমা-রজনীতে,
হেরিয়া অভাব পূর্ণিমার!

‘বৃথা’ তাহা বুঝেও বোঝে না,
কি অদ্ভুত মানবের মন!
শৈশবে মায়ের কোল হ’তে,
পোষে প্রাণে বৃথা আকিঞ্চন!

ফুটে তারা, উঠে চাঁদ নভে,
ভাবি’ মনে খেলাবার সাথী,
ডাকে শিশু,- “আয় কাছে আয়,”
ধরিবারে যায় হাত পাতি!

বয়সের সাথে মানবের,
দুরাশারো বাড়ে পরিমাণ!
ছাড়াইয়া জীবনের সীমা,
মরণেরো ঊর্দ্ধে তার স্থান!!

১৩০৩।