দেখেছি জুয়াড়ির নৌকো তিনজন আরোহীকে নিয়ে
অশুভ আকর্ষণে ছুটে যাচ্ছে কালো পাল তুলে
লণ্ঠনের চোরা আলো লেপে গেছে ঝুলে।
লটকে পড়েছে বিবি, উলঙ্গ নর্তকীর শেষ রাত্রি যেন
ফেনা মুখে ঠিকরোয় গ্লাস
তিনহাতে ঘুরে আসে তাস
ছৈ-এর ঘোমটায় অবসন্ন গণিকার গান
ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত, চুমু, হাসি
তিন জুয়াড়ির মুখ, লোভাতুর দুর্গন্ধ নিঃশ্বাসে
অম্ল বমির গন্ধ ভেসে গেলে জলে
জুয়াড়ির নৌকো ছুটে চলে।
দেখেছি জুয়াড়ির নৌকো অদম্য তান্ত্রিক
কী অক্লেশে প্রবেশ করে সমুদ্রের যোনির ভিতর
অনুর্বর অস্তিত্ব, সংখ্যাতীত আত্মার স্তর
ডুবে থাকা প্রেত দ্বীপ, শ্যাওলার বেড়াজাল
সাঙ্কেতিক ফোরামিনিফেরা
কোকেন ভেজানো চোখ, বেঁকা ছুরি, অদৃশ্য তস্করের ডেরা
জুয়াড়ির নৌকো ঠিক তীব্রবেগে পথ করে নেয়
সুন্দরীর নাভিকুণ্ডে তীব্র ঘূর্ণির মধ্যে
শ্বাসরুদ্ধ নোনাজল ঠেলে
জুয়াড়ির নৌকো যায় ফসফরাস আহবান জ্বেলে।
দেখেছি আকাশতলে, মৃতদেহ বিক্রয়ের হাটে
এক অঞ্জলি জলে, দর্শন-বাণিজ্যের ঘাটে
শ্মশানে ও স্নানলগ্নে, সভ্যতার ভাগাড়ে
জুয়াড়ির নৌকো ঠিক ধীর চুপিসাড়ে
কালো পাল মেলে দিয়ে বাদুড়ের ডানার আকারে
শূন্যতা তুচ্ছ করে অন্ধকার দিকে চলে যায়।
কখনও ভেবেছি আমি অসহ্য এ ভীতি দৃশ্য
আর দেখব না
নিজেকে পতিত আর মারীর শিকার বলে মনে হয়
মজ্জা, স্নায়ু, চৈতন্য কতদিন ভয়ঙ্করে নিমজ্জিত
ছুটে গেছি অত্যাচার শেষ করে দিতে
সমুদ্রজলের রাত্রে, মিনার চূড়ায় কিংবা
যোদ্ধা রেলপথে
সময় যখন প্রায় ত্যাগ করে চলে গেছে
অযুত চাকার শব্দে, অণুক্ষুদ্র শহরের পথে, বিষাক্ত নীলজলে
মৃত্যুর ফণার পরে জুয়াড়ির নৌকো
আমি দেখেছি তখনই
ক্রূরলাস্যে দ্যূতিমান দুমূর্ল্য নরকের মণি।