বন্যার কুকুর

সমস্ত কুকুর আজ ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে ঊর্ধ্বে মুখ তুলে।
আজ আর তাদের কোনো খেলা নেই।
বিগত জন্মের কোনো স্বপ্ন দেখে
মধ্যরাতে অকস্মাৎ
জ্যোৎস্না ও ছাঁয়ার পিছু-পিছু
জ্যামমুক্ত শহরের মতো ছুঁটে যাওয়া নেই।
আহার মৈথুন নিদ্রা- কিছু নেই।
পাঁচিলে দাঁড়িয়ে
ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে এ-রাস্তার সমস্ত কুকুর।

আমি মধ্যরাতে গিয়ে জানালায় মুখ রেখে দেখি,
খুব সূক্ষ্ম
কুয়াশার মতন মেঘের মধ্যে
চাঁদ জেগে আছে।
নীচে কালো জলস্রোত বয়ে যায়।

নীচে কালো জলস্রোত
ক্রমে আরও ফুলে ওঠে, ফেঁপে ওঠে।
মাঝে-মাঝে এক-একটা ঢেউয়ের হাত
যেন কোনো জলমগ্ন শয়তানের
রোমশ থাবার মতো পাঁচিলের দিকে ছুটে যায়।
হঠাৎ লাফিয়ে উঠে
সারিবদ্ধ ছায়ামূর্তিগুলির একটিকে
পেড়ে আনে।

ঝুপ করে শব্দ হয়।
জলের ভিতরে একটা আলোড়ন ওঠে।
বুঝতে পারি,
আর-একটা কুকুর চলে গেল।

সমস্ত কুকুর আজ ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে ঊর্ধ্বে মুখ তুলে।
কাকে ওরা ডাকে?
ডাকে কেন?
যেহেতু শুধুই ডেকে যাওয়া ছাড়া এই রাত্রে আর
কিছুই করবার নেই?
আকাশে ভয়ের ম্লান জ্যোৎস্না জেগে আছে,
নীচে কালো জলস্রোত বয়ে যায়।
আমি দেখি, পাঁচিলে দাঁড়িয়ে আছে অস্থিসার
কয়েকটি কুকুর।
ঊর্ধ্বে মুখ তুলে তারা আজ রাত্রে শুধু
ডাকে… শুধু ডাকে… শুধু ডাকে।

মাঝে মাঝে ঝুপ করে শব্দ হয়।

২৬ ভাদ্র, ১৩৭৭