গোলাপ যাত্রা

রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে বলি,
এই হয়তো শেষবার তোমার ধুলাে উড়িয়ে
হেঁটে গেলুম,
আমাকে ভুলে যেও না।
আগুনে হাত রেখে জ্বলতে জ্বলতে বলি,
এই হয়তো আমার শেষ প্রার্থনা, হে পাবক,
আমাকে মনে রেখো।

সাত-নম্বর বেডের সেই ছেলেটাকে আজ মনে পড়ছে।
তার ফুসফুস যখন
কিছুতেই আর
বাতাস পাচ্ছিল না,
তখন আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলুম!
বলেছিলুম,
ভাই, তুমি যেখানে যাচ্ছ যাও,
আমি তোমাকে সারা জীবন মনে রাখব।

কিন্তু সারা জীবন বলতে আজ আর
দৃষ্টি আমার
যোজন-যোজন ধাবিত হয় না;
দিগন্ত আজ
চোখের নেহাত সামনে এসে ঠেকেছে।

আমি দেখতে পাচ্ছি,
সংকীর্ণ সেই পরিধির মধ্যেই।
লাখো-লাখো গোলাপফুলের মেলা বসেছে,
তাদের কারও বয়েস চোদ্দ, কারও উনিশ, কারও তেইশ।
আমি বুঝতে পারছি,
তাদের মিছিলের মধ্যে অলক্ষ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে
মৃত্যু।
বৃন্ত থেকে যে-কোনো মুহূর্তে তারা ঝরে পড়তে পারে।

আমি আমার ঘর থেকে উঠোনে নেমে এসে বলি,
ভাই,
টাটকা এক মুঠো বাতাস আনতে
দিগন্তের ওই দেওয়াল ভাঙতে এখন আমি যাত্রা করব;
যাতে তোমরা মৃত্যুর নিশ্বাসে ঝরে না পড়াে,
কিন্তু অনন্ত জীবন পাও।
এই আমি আমার ঘরের চাবি তোদের হাতে তুলে দিয়ে গেলুম,
আমাকে তোমরা মনে রেখাে।

৭ ফাল্গুন, ১৩৭৭