নিজের অগ্নির কাছে ফিরে

বাড়ি যাবো ব’লে মন স্থির ক’রে আমি তেজগাঁয়
গাড়িতে উঠেছিলাম। যাওয়া হয় নি।
মাঝপথে, ধীরাশ্রমের খা খা শূন্যতায় প্রাচীন পাহাড় থেকে
ভেঙে পড়া একটুকরো অর্থহীন পাথরের মতো
আমি দ্রুত নেমে গিয়েছিলাম।

অথচ যে-রৌদ্র আমাকে আকর্ষণ করেছিল
তার সাথে কোনো কথা হয় নি।
যে-শূন্যতা আমাকে প্রলুব্ধ করেছিল,
বিভ্রান্ত করেছিল, তারও সঙ্গে না।

যুদ্ধের সৈনিক হবো ব’লে আমি একদিন যুদ্ধক্ষেত্রে
গিয়েছিলাম। আমার যুদ্ধ করা হয় নি।
আমি শত্রুর বাংকার ছেড়ে, সীমান্তে রক্তের নদী দেখে
গেরীলার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।

যে জলদেবী আমাকে আহবান করেছিল
তার পঁচিশবছরের সঞ্চিত অভিমান
আমার চোখের জলে যুক্ত হ’য়ে স্বপ্নের স্রোতে ভেসে গেছে।
আমি তার মুখোমুখি নিষ্পলক তাকিয়ে থেকেছি।
কোনো কথা বলা হয় নি।
যে আমার ক্ষতচিহ্নে কোমল স্পর্শ রেখে একদিন
বহু বেদনায় বলেছিল; ‘হবে’ তারও সঙ্গে না,
তারও সঙ্গে না।

মুক্তি-বাহিনীর কালো জীপ থেকে ছিটকে পড়া
বুলেটের মতো রাজপথে গড়াতে গড়াতে একদিন
জনতার স্বাধীনতার মিছিলে গিয়েছিলাম-
যে মিছিল বধু হ’য়ে একদিন আমাকেও
কাছে ডেকেছিল-তার সঙ্গে কোনো কথা হলো না,
যে জনতা আমাকে কবি বানিয়েছে তারও সঙ্গে না।

আমি মাঝপথে ফিরে এসে শব্দহীন মধ্যরাতে
আমার আত্মার সাথে, দুঃখ-জ্বালা-দহনের সাথে
একা একা আলাপ করেছি। আত্মায় আগুন জ্বেলে
রাজনীতি, ধর্ম, প্রেম, মুক্তির ইশতাহার পুড়িয়ে ফেলেছি।

পিতা মাতা ভাই বোন প্রিয় পরিজন সময়ের অর্থহীন
স্রোতে ভেসে গেছে- পদ্মস্পর্শে যে কাগজ প্রতিদিন
পদ্য হয়ে ওঠে, তার সঙ্গেও কথা বলা হলো না,
যে নারী নিবৃত্ত করে যৌবনের প্রজ্জ্বলন্ত ক্ষুধা-তারও সঙ্গে না!