কথোপকথন ৪

শুভঙ্কর
বিয়ের কনের মতো হয়ে যাও এক এক সন্ধ্যায়।
কে দেয় তোমাকে ওড়না? মেঘ? নাকি বসন্তবিকেল?
কার বেনারসী পরে তিলোত্তমা? সে কি পৌরাণিক
দ্রৌপদীর বসনের অনন্তের থেকে ছিঁড়ে নেওয়া?

কি করে এমন হয়? বিবহা-মুখর শঙ্খরোলে
মুছে যায় কলকাতার ট্রাম-বাস-ট্যাক্‌সির ঝঙ্কার।
ময়লা রেস্টুরেন্টে এক অবাক ম্যাজিকে ফুটে ওঠে
বাসরঘরের দৃশ্য, ফুলের বিছানা, তুমি শুয়ে।
এ ম্যাজিক কে শেখাল? কি করে শিখলে? কার কাছে?
আমি তো পারি না আর বর হতে? এত বেঁকে গেছি।
এত কুঁজো হয়ে গেছি পাথরের পরাক্রান্ত চাপে
আয়নায় দাঁড়ালে দেখি ধ্বংসস্তুপেরই এক ছায়া।

নন্দিনী, সত্যিই যদি জানা থাকে গোপন ম্যাজিক
আমাকে বিবাহযোগ্য বয়স পার না ফিরে দিতে?

নন্দিনী
তোমার মতন চোখ পেলে আমি এই পৃথিবীর
সূর্যম্পন্দনের গতি বদলে দিয়ে প্রখর রৌদ্রের
প্রশাসনকে তুড়ি মেরে যখন তখন গড়ে তুলতে পারতাম
অমল ধবল এক জ্যোৎস্নার বাদশাহী তাঁবু।

তোমার মতন মন পেলে আমি এই পৃথিবীর
স্থাবরকে জঙ্গমের জলস্রোতে ভাসিয়ে দিতাম।
সমস্ত জলের কাছে পৌঁছে যেত ছাপা সার্কুলার
– এই নাবিকের জন্যে সমুদ্র তোরণ গাঁথে যেন।

তোমার একটা চোখে একদিন পুড়েছে পমপেই
আরেক চোখের মধ্যে হরিণেরা জল খেতে আসে।
সেই চোখ দিয়ে তুমি যখন আমাকে দেখো, আমি
কলকাতাকে পার হয়ে কিন্নরীর স্বর্গে পৌঁছে যাই।
আমার ঘামের গন্ধে এখনো পেট্রোল লেগে আছে
শুভঙ্কর, কেন তুমি আমাকে এমন মিথ্যে গড়ো?

শুভঙ্কর
আমিও ভেবেছি ঠিক একথাই, পেট্রোলের কথা
পেট্রোল বা ডিজেলের অলৌকিক দক্ষতার কথা।
যত ভাবি তত ছোট, কীটানুকীটের মতো ছোট
হয়ে যেতে থাকি যেন, মানুষজনের কেউ নই।

মানুষের কথা আজ ভাবতে হবে দুরকম ভাবে।
এক তার রক্ত মেখে, আর তাকে রৌদ্রবর্ণ করে।
আমাদের দুটো কাজ, একই সঙ্গে, ভাঙবে শাবল,
কর্নিক লাগাতে থাকবে নতুন দেয়ালে প্লাস্টার।

এক আধ বছর নয়, দশ বিশ বাইশ বছর
শুধু ধ্বংসশব্দ, শুধু পতনেরই জয়জয়কার।
যেন এই পৃথিবীর জন্ম শুধু জন্ম দিয়ে যেতে
একটি আঁতুড় ঘরে লক্ষ কোটি মরণাপন্নের।

নন্দিনী, প্রতীক হও, প্রতীকের বড় প্রয়োজন।
যে বেহুলা জলে ভাসে মৃত্যুকে কোলের পরে নিয়ে,
কি করে ভুললে তার স্বর্গজয় করা নৃত্যরূপ?