কথোপকথন ৬

নন্দিনী
আজ বর্ষার পেখম-ছড়ানো নাচ
জানলা ভিজছে, পর্দা ভিজেছে আগে।
উলঙ্গ গাছ নাইতে নেমেছে হাসি-খিলখিল পাতা,
কদম ঝরছে রাগে নাকি অনুরাগে?

বর্ষার গানে কেন বাজে একতারা?
সুখের বসনে বেসুরো কাদার ছিটে।
নিশ্চিত করে সেখানে যাওয়ার সে ঠিকানা ভুলে গিয়ে
আঁকড়িয়ে যেন বিয়োগান্তক ভিটে।

আজ বর্ষার শুধু সেইটুকু ভালো
যতটুকু জুড়ে তোমার স্মৃতির পলি।
মেঘে মেঘে ঠিক তোমারই মতন একজন চেয়ে আছে
সব গোপনতা তাহলে তাকেই বলি।

শুভঙ্কর
বৃষ্টি আজ ঘন জাল ঝড়িয়েছে নগর-চত্বরে
সাহসী জলের মতো, মাছ ধরবে, ঝাক-ঝাঁক মাছ,
মাছ যদি না মেলে তো হেঁসেলে শোবার ঘরে ঢুকে
গৃহস্থের হাঁড়ি-কুড়ি বিছানা-বালিশ-চৌকাঠ
তছনছ করে দেবে লুঠতরাজের হল্লা তুলে।

এ রকম ঘনঘোর বৃষ্টি এলে সমস্ত শূন্যতা
ভরে যায় শুশ্রুষায়, মুখরেখা ফিরে পায় ছাঁচ।
মনে হয় আমি ঝরছি, এ আমারই পুঞ্জীভূত তাপ
পেরেছে নির্মমরূপে নির্ঝর হওয়ার স্বাধীনতা।

কী নির্জীব, কী নির্জীব, প্রাত্যাহিকতার রোমন্থন,
গুমোট গরম যেন বাতাসের নয়, সময়েরই।

অৰ্জুর গাণ্ডীব তুলতে ভুলে গিয়ে যেমন বিহ্বল
সে রকমই বিহ্বলতা, বিফলতা বলয়ে বলয়ে।
চেতনা পাথর হয়ে মরা ঘাসে, যদিও উচ্ছাস
মদের ফেনার মতো কোথাও উপছোয় মধ্যরাতে।

বৃষ্টির ভিতরে ডুবে যে ইচ্ছায় ডানা গজিয়েছে
কাল দেখা হলে বলব, কিন্তু কালও যদি শ্রাবণের
তাতা থৈ নাচ চলে? তাহলে এখনই বলে রাখি,
তুমি আসবে নৌকা হয়ে, আমি তাকে বন্যায় ভাসাব।

নন্দিনী
বৈষ্ণব কবিতা ঝরছে
ঝরছে গীতগোবিন্দের শ্লোক,
ঝরছে মিঞা তানসেন
মেঘমল্লারের ভিজে চোখ।
ঝরছে রবীন্দ্রনাথ।

ভানুসিংহের পদাবলী
প্রত্যেক ফোঁটায় ঝরছে
আমার অস্ফুট কথা-কলি।
শুনতে পাচ্ছো, শুনতে পাচ্ছো
শুভঙ্কর নৌকা ভাসিয়েছি।
তুমি মেঘদূত হও
আমি মন্দ্রাক্রান্তা হয়ে গেছি।