কথোপকথন ৩০

– তুমি আমার সর্বনাশ করেছ শুভঙ্কর।
কিচ্ছু ভালো লাগে না আমার। কিচ্ছু না।
জ্বলন্ত উনোনে ভিজা কয়লার ধোঁয়া আর শ্বাসকষ্ট
ঘিরে ফেলেছে আমার দশদিগন্ত।
এখন বৃষ্টি নামলেই কানে আসে নদীর পাড় ভাঙ্গার অকল্যাণ শব্দ
এখন জ্যোৎস্না ফুটলেই দেখতে পাই
অন্ধকার শশ্মানযাত্রীর মতো ছুটে চলেছি মৃতদেহের খোঁজে।
কিচ্ছু ভালো লাগে না আমার। কিচ্ছু না।
আগে আয়নার সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাজগোজ
পাউডারে, সাবানে, সেন্টে, সুরমায়
নিজেকে যেন কেচে ফর্সা করে তোলার মতো সুখ।
এখন প্রতিবিম্বের দিকে তাকালেই
সমস্ত মুখ ভরে যায় গোল মরিচের মত ব্রণে, বিষাদে বিষণ্ণতায়।
এখন সমস্ত স্বপ্নই যেন বিকট মুখোশের বিকট হাসাহাসি
দুঃস্বপ্নকে পার হওয়ার সমস্ত সাঁকো ভেঙ্গে চুরমার।
কিচ্ছু ভাল লাগে না আমার। কিচ্ছু না।

– তুমিও কি আমার সর্বনাশ করোনি নন্দিনী?
আগে গোল মরিচের মতো এতটুকু ছিলাম আমি।
আমার এক ফোঁটা খাঁচাকে তুমিই করে দিয়েছ লম্বা দালান।
আগাছার জমিতে বুনে দিয়েছ জ্বলন্ত উদ্ভিদের দিক চিহ্নহীন বিছানা।
এখন ঘরে টাঙ্গানোর জন্য একটা গোটা আকাশ না পেলে
আমার ভাল লাগে না।
এখন হাঁটা-চলার সময় মাথায় রাজছত্র না ধরলে
আমার ভালো লাগে না।
পৃথিবীর মাপের চেয়ে অনেক বড় করে দিয়েছ আমার লাল বেলুন।
গোল মরিচের মতো এই একরত্তি পৃথিবীকে
আর ভাল লাগে না আমার।