কথোপকথন ২৫

শুভলক্ষ্মী রেকর্ড প্লেয়ারে।
পড়ার টেবিলে আমি, চিঠি লিখছি এখন বিকেল
ট্রামের চাকার নিচে শহরের আত্মার চিৎকার
সমাজ-ভাসানো প্রেম, পরিপূর্ণ আত্মনিবেদন
গানে কী সহজ।
শুভলক্ষ্মী শুনতে শুনতে খরার অঞ্চলে বৃষ্টি নামে।
ধুয়ে যায় রক্ত দাগ, কাটা-ছেঁড়া, দুঃখের আঁচড়।
অন্ধকার যত গাঢ়, অভিসার তত সুনিশ্চিত
এই যেন দৈববাণী, নক্ষত্র-অক্ষরে লেখা ঋক।
কবিতায় প্রশ্ন থাকে,
শিল্পের জিজ্ঞাসা চিহ্নে জুড়ে থাকে হাজার ভাঙন।
গানেই উত্তর শুধু, যে যেমন চায় উত্তরণ।

তুমি আমি কেউ গান নই,
গান শুনি, গানে ডুবি, গান হতে পারি না কখনো।
আমাদের দেখা হওয়া, মেশা, সাঁকো গড়া
যখনই গানের মতো, খুলে যায় ফোয়ারার মুখ
ভিজি, সুরে ধুয়ে যায় ব্যান্ডেজের তুলো,
তখনই উল্কার বৃষ্টি, ঝাউবনে হাওয়ার চিৎকার।
অথচ গানের কত কাছাকাছি পৌঁছিয়েছিলাম।
প্রথম ভোরের রঙে সমস্ত কোমল হয়ে উঠেছিল প্রায়
সমস্ত কথার ডালে পাখি বসেছিল।
লোকলজ্জা ভুলে কুঁড়ি খুলে দিয়েছিল তার প্রকাশ্য-যৌবন
আমাদের কাঠের কেবিন
বাসরঘরের শোভা পেয়ে গিয়েছিল যেন মনের বুনোনে।
তোমাকে সাজাব বলে চন্দনের বাটি ছিল হাতে।
আজ সব খেদ, শোক, দাহ, দুঃখ মিটিয়ে তোমার
দুই হাতে আত্মসমর্পণ,
এভাবে প্রস্তুত আমি, এই নাও সর্বস্ব আমার
কী প্রতিমা গড়তে চাও গড়ো।
এই তুঙ্গ অনুভবে যখন ছিঁড়েছি গুল্মজাল
লোহার বেড়িকে ছুঁড়ে স্বনির্বাচনের স্বাধীনতা,
তার সব কাঁটা হবে গায়ের গহনা, এইভাবে
সমস্ত প্রস্তুতিপর্ব শেষ, ঠিক তখনই দমকলে
অগ্নিনির্বাপক ঘণ্টা, সন্ত্রাস সশব্দে ছুটে আসে।
ছিন্ন আমি খসে পড়ি নিজেরই স্বপ্নের বৃন্ত থেকে।
আমাদের সাঁকো ভেঙে যায়।
নতুন কবিতা কিছু লিখেছ কি?
লোরকা পড়ছ খুব?
বেশি পড়ো, কিন্তু কম সিগারেট খাও।
এত শীর্ণ। প্রতিদিন এত শীর্ণ হয়ে যাচ্ছো কেন?
দেখা হবে, যথাস্থানে বারোই এপ্রিল, পাঁচ, সাড়ে পাঁচটায়।
অজস্র চুম্বন।

(নন্দিনীর চিঠি শুভঙ্করকে ৯)