কথোপকথন ৬

স্বপ্ন নয়
পাখি তাকে আকস্মিক ছিনতায়ের মতো
ডেকে নিয়ে গিয়েছিল দুঃখের ওপারে।
ঝুড়ি ঝুড়ি ইট-সুরকি-সিমেন্ট-পাথর-বালি দিয়ে বলেছিল
-বহুদিন আস্তাবলে নিরাশার কাদাজলে আছো
এবার নিজের বাড়ি-ছাদ-সিঁড়ি বারান্দার থাম গেঁথে নাও।
আমার রক্তের মধ্যে সমস্ত ফুলের বীজ আছে
বাগানে ছড়াও।
আমার গর্ভের মধ্যে শত ঝর্ণাজল
স্নান করে স্বাস্থ্যবান হও।

[তুমি ঠিক এভাবে কথাগুলো আমাকে বলনি। রেস্তোরাঁর কাঠের চেয়ারে বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছিল যখন, বলেছিলাম এখানে একটা পালঙ্ক থাকলে হেলান দেওয়া যেত। বলতে ইচ্ছে করছিল শুয়ে পড়া যেত। লজ্জায় পারিনি। তুমি তো চিলি-সসের বোতলের মতো বোকা নও। তখুনি বুঝেছিলে কি মিন করছি আসলে। ঠোঁটের হাসি চোখে লুকিয়ে মৃদু চাপড় দিয়েছিল পিঠে। এটা কি তোমার বাড়ি নাকি যে, বাবুর জন্যে খাট-পালঙ্কে বিছানা-বালিশ সাজিয়ে রাখবে? তখনই বলি আমি, আমার বাড়ি হলে সাজিয়ে দেবে? তুমি গাল রাঙিয়ে চোখের উপর লজ্জার ঘোমটা টেনে এমন জোরে বলে উঠলে ‘আজ্ঞে ন্যা’, সেটাই তখন ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠল একটা বিরাট হাঁ হয়ে। তবুও, জেদী আমি তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাইলাম হ্যাঁ- টা। জেদ-এ তুমিও মা মনসা। শেষ পর্যন্ত দাঁতের কামড়ে ঠোঁটটা জ্বলে উঠল যখন, বলেছিলে, কি দিইনি যে তোমার এত রাগ? রাত্রে তার থেকেই এই কবিতা। বাকিটা শোনো]

পাখি নয়,
ঘুম তাকে ছেঁড়া কাঁথা থেকে ছিন্ন করে
দুঃখের ওপারে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল।
মেহেদী নকশার মতো মাখমাখি পেয়েছিল ঘুমে।
পাখির ঘাড়ের পরে ঘাড় রেখে, পালকে পালকে
তার সব উপবাস ভরে তুলেছিল খাদ্যপ্রাণে।
ক্ষীরভরা আতার মতন
তখন সে পৃথিবীর একমাত্র পরিতৃপ্ত সম্পূর্ণ যুবক।