কথোপকথন ৭

তোমার চিঠি পেলাম আজ,
পোস্টাপিসের দয়ায় পাক্কা সাতদিন পরে।
অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিন তুমি যখন আয়নার সামনে সাজছে মায়ের বেনারসীতে
শত-জাহাজ-ডুবোনো হেলেন,
আমার তখন একশ তিনের পারা নেমেছে একশ একে।
৬.৭.৭৬ থেকে পুরোপুরি বিছানাবন্দী।
গনগনে চুল্লি সেঁকে চলেছে ব্রেকফাস্টের রুটি।

অথচ কি আশ্চর্য
তুমুল জ্বরে অচৈতন্য যখন
এলিয়টের সেই বিখ্যাত কবিতার মতো যখন বিছানায় ইথারাইজড
এক, এক করে একশ সাতচল্লিশটা কোলাপসিবল ভেঙে
তুমি, জীবপালিনী
আমার আগুনে-পোড়া শস্যক্ষেত্রে ছুটে এসেছো
পোপন ফোয়ারার উৎক্ষিপ্ত জলোচ্ছাস।

মহাজাগতিক শূন্যতার ভিতরে
ভারহীন নিরবচ্ছিন্ন ওড়াওড়ি আমাদের।
সিসটাইন চ্যাপেলে দেবদূত
অথবা নিউজ উইকের রূপবান রঙীন রকেটের মতো
আমাদের নির্বাস ত্বকে
ব্লেকের সোনালি বিভার পালিশ।

অনন্তের ভিতরে অদ্ভুত বদলে গিয়েছিলে তুমি
কোটি কোটি নক্ষত্রের মোজেইকে
দপ দপ করছিল তোমার বাইজেনটাইন রূপ।
পৃথিবী নয়।
কলকাতা নয়।
২৩৬ এর তিনের এ ভবানী দত্তের গলির একতলার অন্ধকার কুঠরি নয়,
এই জ্যোতি সমুদ্রের দেয়াল দরজাহীন ভাসমান বায়ুস্তরই
আমাদের যোগ্য বাসরঘর।

অথচ এই তোমাকেই
কলকাতার ইট-কাঠে পাই যখন
শরীরের চারপাশ ঘিরে একশোচুয়াল্লিশ,
সন্ধ্যে হলেই মিলিটারি-হাঁকানো কারফিউ।
দুঁদে রাজ্যপালের গর্বিত গ্রীবা
হাতে সংবিধানের শখের করাত
যে কোন ন্যায়সঙ্গত তৃষ্ণা কিংবা রক্তের দরখাস্তকেও
নাকচ করে দিতে পারো তখন এক ভ্রুকুটিতে।

জ্বরের ভিতরে কী লাজ-লজ্জাহীন ছিল তোমার সমর্পণ।
যখন বললাম, নন্দিনী
শীত চিরে চলেছে কসায়ের ছুরিতে
নিজেকে বিছিয়ে দিলে আমার উপর
মোলায়েম বুটিদার চাদর।

পুনশ্চ
জ্বর নেমেছে।
এখন বুক জ্বলছে ঈর্ষায়।
হায়! মায়ের বেনারসী
হায়! বৌদ্ধ ভিক্ষুর জুঁই ফুলের গোড়ে
দুঃখ এই
তোমার রাজেন্দ্ৰনন্দিনী রূপের দ্রষ্টা হল এমন একজন
বেশি চিনিতে আমাদের চা-কফিকে বিষিয়ে দেওয়াই
যার নিত্যকার কুশলতা।