কথোপকথন ৮

বুড়ো রিকশাওয়ালাকে সেদিন, সত্যিই উচিত ছিল
অন্তত আরো দুটাকা বকশিশ
ঘরে ফেরার পর, বিশ্বাস করো, মনের মধ্যে খচখচ।
ঘরে ফেরার পর, গায়ের ভিজে জামাটা খুললেও বৃষ্টির গন্ধটা
যখন গায়ের আরেক জামা, গন্ধের ভিতরে তোমার এক আকাশ চুল
মোমের আলোর মতো গলে পড়া ঠোঁটের অরাজকতা
হাতের পাঁচটা আঙুলের ডাল ডালিমে ডালিমে ভরাট,
এক আমিতে আর এক আমির নবজাগরণ, আমি যেন আমারই উদ্ভিদ
পল্লবে পল্লবে শাখা প্রশাখায় বিপ্লবের শব্দের মতো মর্মর, সারা শরীর
শির শির, যেন সারাক্ষণ, হয়তো সারাজীবনই আমার ভিতরে রয়ে
যাবে এই নবীন গাছ তার সবুজ বেহালায় ছড় টেনে টেনে, পেটে এক
পিপে মদ ঢালার মতো টলমল, দুলতে দুলতে মাটিতে শিকড়
রেখেও হাওয়ায় যতদূর উড়ে যেতে পারে গাছ, ততদূর, সেই মাঝ আকাশে
পাঁড় মাতালের মতো দুলতে দুলতে, কৃতজ্ঞতা, গভীর
কৃতজ্ঞতায় বার বারই মনে হচ্ছিল, বুড়ো রিকশাওয়ালাটাকে কম করে
আরো দুটো টাকা বেশি বখশিশ।
রং মাখানো গপ্পো নয়, বিশ্বাস করো, সত্যিই, স্পষ্ট দেখত
পেতাম, অলৌকিক নেমে আসবে একদিন লম্বা ক্রেনে, হঠাৎ
প্লাবনের মতো বৃষ্টি আমাদের দুজনকে ঢেকে দেবে তার
সাদা মশারির আড়ালে, ডান-বাঁয়ের পৃথিবী ভিজে ন্যাকড়ায়
শেলেটের অক্ষরের মতো মোছা, পৃথিবীর মাঝখানে আমরা
দুজনেই শুধু এই জীয়ন্ত শহরের প্রতীক, ভাসমান শহরে দুটি স্থির
জলস্তম্ভ, আমরাই অ্যান্টেনা এবং টেলিভিশন, ফিল্মোৎসব,
আবার হলঘর জোড়া প্রদর্শনী।
বুড়ো রিকশাওয়ালাকে, তুমিই বল, ওর জন্যেই তো সেদিন, ওর জন্যে,
গাড়িটাকে গর্তে ফেলে আর টানতে না পেরে, অঝোর
বৃষ্টির ভিতরে রিকশায়, রিকশার পর্দা টাঙানো বাসর ঘরে,
তোমার বৃষ্টিতে আমি, আমার বৃষ্টিতে তুমি, ভিজতে ভিজতে, বাইরের
বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত ঐ যে অনন্তকাল, কলকাতার ব্যস্ততম
রাজপথের মাঝখানে ঐ যে আমাদের নিভৃত অন্ধকার ও রণাঙ্গন,
আমার লুটপাটের সুখ, তোমার সর্বস্বান্ত হওয়ার উদ্ভাস, বুড়ো
রিকশাওয়ালাকে আরো দুটো টাকা বেশি দিলেও, কম পড়ত না
কিছু, আমরা তো তখন ভাগাভাগি করে নিয়েন্থি একশো বছরের ভালোবাসা।