কথোপকথন ১৫

কামান দাগলে যেমন হয়
আগুন-হাওয়ার তোড়ে
ছিটকে যায় হাত-পায়ের অর্ধেক,
সেই রকম একটা ভাঙা আয়নার সামনে
দাঁড়িয়ে।
কিংবা মনে কর
ঐ রকম একটা আয়নাই
এখন আমার ঘরের দেয়াল
নাটকের একমাত্র দৃশ্যপট।
কাচের টুকরোর ভাঙাভাঙির ফাঁক দিয়েই
প্রবেশ এবং প্রস্থানের দরজা
ঘনিষ্ঠ এবং আগ্নেয়
দুরকমের সংলাপের
অথবা যখন নিজের সঙ্গে যুদ্ধ
কিংবা খোলা-তরবারির লড়াই
রণক্ষেত্রে অনুপস্থিত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে
অথবা হাঁটু মুড়ে যখন ভালোবাসার সামনে
দুহাতের তালু জুড়ে গিয়ে গোল বাটি
পূর্ণতার ভিক্ষাপাত্র
সেই ঢালুতে আছড়ে পড়ছে
চণ্ডালিকার জল
খাচ্ছি
খেতে খেতে ছড়িয়ে যাচ্ছে
গোপন স্নানও হয়ে যাচ্ছে যেন
সেই দুষ্প্রাপ্য জলধারায়
আয়নার বিদীর্ণ টুকরোয়
সমস্ত, সব দৃশ্য
সব রকমের উত্থান ও পতন
মানুষের মুখে গাছের ফুল
ফুলের চারপাশে মানুষের পাপড়ি
খুন-খারাপির রক্ত ঘাঁটতে ঘাঁটতে
মানুষের চেতনায় সন্দেহ, ক্রমে প্রশ্ন
প্রশ্ন থেকে চিৎকার
চিৎকারে টাল-খাওয়া পাহাড়
পাহাড় ফাটিয়ে প্রতিধ্বনি
সারারাত জেগে ভুল ভাঙা
ভুল ভাঙতে ভাঙতে
ক্ষতচিহ্নে জোড়া লেগে যাওয়া
আমাদের গোটা অর্থাৎ আস্ত হয়ে ওঠা
কেউ আমাদের দেখতে পাচ্ছে না সম্পূর্ণ
অথচ আমরা হয়তো সম্পূর্ণ
আবার আমরাও হয়তো আপাদমস্তক
একজন নই
নানা টুকরোর জোড়
নানা অস্থি অথবা অস্তিত্বের ফালি জুড়ে জুড়ে
গোল বৃত্ত
এই ভাবেই ভাঙা আয়নার সামনে
কিংবা ভাঙা আয়নার ভিতরে
অথচ একটা গোটা আয়নাই ছিল
আমাদের ঘুম থেকে জেগে ওঠার
বৈদ্যুতিক আকর্ষণ
আমাদের লাঙল
ফলা চালিয়েছিল সেইভাবেই
মাটিতে
স্বপ্ন-সংকল্পের ত্বরিত জাগরণের চেয়ে
আমাদের প্রস্তাব ছিল এমন দৃশ্য রচনায়
যা সূর্যের মতো নিজের আলোয় সম্পূর্ণ
এখন
ভাঙা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
তুই যখন নিজেকে দেখিস
অথবা আমি আমাকে
অথবা আমাদের দুজনকে অন্য সকলে
অথবা আমরা সমস্ত কিছুকে
আর আয়নার ভাঙা পরকলাগুলো
সময়ের মার খেয়ে যাদের পিঠে রক্ত দাগ
তারাও কি আমাদের বলতে চায় কিছু?
কিংবা আমরা হয়তো
আয়নার চৌচির ফাইলের খুব গভীরে
পৌঁছতে পারি নি এখনো।