কথোপকথন ৩৩

শুনলে হয়তো হাসবি
কিন্তু সত্যি বলছি কোথাও লকলকে আগুন দেখলেই
আজকাল সিনেমা-দেখার মতো উপুড়।
কারণটা বলি।
কিছুদিন আগে কোথায় যেন পড়লাম
স্বদেশী আন্দোলনের দুর্দিনে
নন্দলাল বসু এঁকে দিয়েছিলেন এক গুচ্ছ পোস্টার
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অত্যাচারিত মানুষের উত্থানকে
অপরাজেয় করে তুলতে।
কিন্তু পুলিশি হামলার ভয়ে
সে-সব জ্বলন্ত পোস্টার আগুনের পেটে।
খবরটা পড়ার পর থেকেই
আগুনের ভিতরে ক্রোধে বোধে গর্ভবান মানুষের ইস্পাত-মুখ
আগুনের ভিতরে অবিরল শিকল ভাঙার উল্লাস
আগুনের ভিতরে চট্টগ্রামের ঝকঝকে অস্ত্রাগার।
একদিকে ফাঁসির মঞ্চে এগিয়ে চলেছে জয়ধ্বনিময় কিশোর
অন্যদিকে নগ্ন সেনাপতির পিছনে
বজ্ৰানলে আপন বুকের পাঁজর-জ্বালানো হাড়-কঙ্কাল।
এইভাবে কিছুদিন।
তারপর ভুলে যাই সব।
হঠাৎ কদিন আগে আর এক ধাক্কা।
লোরকার সারা জীবনের সনেটগুচ্ছ ভরা ছিল
জনৈক সৈনিক-বন্ধুর পকেটে।
ফ্রাঙ্কোর জল্লাদ-আগুনে
সৈনিক এবং সনেট দুটোই একদিন পুড়ে ছাই।
খবরটা পড়ার পর থেকেই
আগুনের ভিতরে ব্লাড ওয়েডিং এর ছুটন্ত ঘোড়া
ঘোড়ার পিছনে বল্গাহীন কামনার বাঁকা ছুরি
ছুরির পিছনে নীল চাঁদের লাল রক্তের খিদে
আর সবুজ গীটারে কেবলই এক হলুদ বিলাপ।
বিশ্বাস কর অমিতাভ
এখন আগুনের দিকে তাকালেই
দেখতে পাই লোরকার পুড়ে-ছাই সনেটগুচ্ছের
যাবতীয় অক্ষরমালা অর্থাৎ এইসব
হেভেন, ডেথ, মার্ডার, ব্লাড, উইং,
মাউন্টেন, লাভ, রক, ড্যাগার, রুট,
ইউরিন, হেট, লাফটার, ব্রেসট,
লিবার্টি।