কথোপকথন ৬

কম নয়, প্রায় বছর পঞ্চাশেক আমরা এই পৃথিবীতে,
পৃথিবীতে কতজন আছি ভাবতে গেলে মাত্র অল্প কজনের মুখ,
যেন মাত্র শ দেড়েক,
আসলে গোনা-গুনতি করি শুধু সেই কজনকে
যাদের বুকের ব্যান্ডেজে লাল ছোপ, আর
যারা সারা রাত লম্বা আলোকস্তম্ভগুলোকে গিলে গিলে মাতাল,
দৌড়তে চায় আকাশ ছিঁড়ে, যেন
নক্ষত্রপুঞ্জে আড়াল হয়ে আছে জাহাজ চলাচলের
সব চেয়ে শৌখিন এবং সম্ভ্রান্ত স্টেশনটা,
আর এইমাত্র রাষ্ট্রবিরোধী গীটারে রক্ত-রোদের
তার পরাতে গিয়ে নিহত হল যারা,
এমনকি কিছু কিছু মৃত মানুষকেও আমরা গণনা করে ফেলি,
ভেজানো ঘরের দরজা খুলেই দেখতে পাই
চেয়ার-টেবিল, কাগজ, কলম, কাঠের আলমারি, পর্দা,
পাপোষ জুড়ে বসে আছেন তাঁরা,
এই শ দেড়েক মানুষের মধ্যে অবশ্য আরো কেউ কেউ
থেকে যায় যারা মুকুটের চেয়ে অনেক বেশি
ঝুঁকে পড়ে মাটির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা
এক টুকরো শিকড়ের দিকে,
পাশা খেলতে বসে যারা পণ হিসেবে পাশে রেখে দেয়
নিজেদের আপোষহীন হৃৎপিণ্ড,
আর যারা কিছুতেই সায় দেয় না শিকল-পোড়ানো
চিতার আগুনে জল ঢালতে।

ভিয়েতনামের আকাশে যখন ফিনকি দিয়ে ওঠে আক্রমণ
এবং পাল্টা আক্রমণের ঝনঝনে হাওয়া,
তখনই কেবল মনে পড়ে যায় আরো সব মানুষের মুখ,
যখন হিরোসিমা পুড়তে থাকে
তখন পাঁজরের ডানদিকে বাঁদিকে অসংখ্য
মা বোন তাই, আফ্রিকার কালো অরণ্যে শিকারি-বন্দুকের জবাবে
যখন গমগম বেজে ওঠে মরণাপন্নের চরম দুন্দুভি,
লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার
ঘর দোর দরজা দালান ছাদ সিঁড়ি লম্বা করিডর।
অমিতাভ, তোর কখনো মনে হয়েছে,
আমাদের হৃদয়ের মাপ নিয়েই এই পৃথিবী?