আশ্বিনে

আকাশ আজিকে নির্মলতম নীল,
উজ্জ্বল আজি চাঁপার বরন আলো;
সবুজে সোনায় ভূলোকে দ্যুলোকে মিল
দূরে-চাওয়া মোর নয়নে লেগেছে ভালো।
ঘাসে ঝ’রে-পড়া শিউলির সৌরভে
মন-কেমনের বেদনা বাতাসে লাগে।
মালতীবিতানে শালিকের কলরবে
কাজ-ছাড়া-পাওয়া ছুটির আভাস জাগে।
এমনি শরতে ছেলেবেলাকার দেশে
রূপকথাটির নবীন রাজার ছেলে
বাহিরে ছুটিতে কী জানি কী উদ্দেশে
এ পারের চিরপরিচিত ঘর ফেলে।
আজি মোর মনে সে রূপকথার মায়া
ঘনায়ে উঠিছে চাহিয়া আকাশ-পানে;
তেপান্তরের সুদূর আলোকছায়া
ছড়ায়ে পড়িল ঘরছাড়া মোর প্রাণে।
মন বলে, “ওগো অজানা বন্ধু, তব
সন্ধানে আমি সমুদ্রে দিব পাড়ি।
ব্যথিত হৃদয়ে পরশরতন লব
চিরসঞ্চিত দৈন্যের বোঝা ছাড়ি।
দিন গেছে মোর, বৃথা বয়ে গেছে রাতি,
বসন্ত গেছে দ্বারে দিয়ে মিছে নাড়া;
খুঁজে পাই নাই শূন্য ঘরের সাথি-
বকুলগন্ধে দিয়েছিল বুঝি সাড়া।
আজি আশ্বিনে প্রিয়-ইঙ্গিত-সম
নেমে আসে বাণী করুণকিরণ-ঢালা-
চিরজীবনের হারানো বন্ধু মম,
এবার এসেছে তোমারে খোঁজার পালা।’

শান্তিনিকেতন
৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৫