আশঙ্কা

ভালোবাসার মূল্য আমায় দু’হাত ভ’রে
যতই দেবে বেশি ক’রে,
ততই আমার অন্তরের এই গভীর ফাঁকি
আপ্নি ধরা প’ড়্বে না কি?
তাহার চেয়ে ঋণের রাশি রিক্ত করি’
যাইনা নিয়ে শূন্য তরী।
বরং রবো ক্ষুধায় কাতর ভালো সে-ও,
সুধায় ভরা হৃদয় তোমার
ফিরিয়ে নিয়ে চ’লে যেয়ো।।

পাছে আমার আপন ব্যথা মিটাইতে
ব্যথা জাগাই তোমার চিতে,
পাছে আমার আপন বোঝা লাঘব তরে
চাপাই বোঝা তোমার পরে,
পাছে আমার এক্লা প্রাণের ক্ষুব্ধ ডাকে
রাত্রে তোমায় জাগিয়ে রাখে,
সেই ভয়েতেই মনের কথা কইনে খুলে;
ভুল্তে যদি পারো তবে
সেই ভালো গো যেয়ো ভুলে।।

বিজন পথে চ’লেছিলেম, তুমি এলে
মুখে আমার নয়ন মেলে।
ভেবেছিলেম বলি তোমায় সঙ্গে চলো;
আমায় কিছু কথা বলো।
হঠাৎ তোমার মুখে চেয়ে কী কারণে
ভয় হ’লো যে আমার মনে।
দেখেছিলেম সুপ্ত আগুন লুকিয়ে জ্বলে
তোমার প্রাণের নিশীথ রাতের
অন্ধকারের গভীর তলে।।

তপস্বিনী, তোমার তপের শিখাগুলি
হঠাৎ যদি জাগিয়ে তুলি,
তবে যে সেই দীপ্ত আলোয় আড়াল টুটে
দৈন্য আমার উঠ্বে ফুটে।
হবি হবে তোমার প্রেমের হোমাগ্নিতে
এমন কী মোর আছে দিতে।
তাই-তো আমি বলি তোমায় নত শিরে
তোমার দেখার স্মৃতি নিয়ে
এক্লা আমি যাবো ফিরে।।

বুয়েনোস্ এয়ারিস্,
১৭ নভেম্বর, ১৯২৪।