আসন্ন রাতি

এল আহ্বান, ওরে তুই ত্বরা কর্।
শীতের সন্ধ্যা সাজায় বাসরঘর।
কালপুরুষের বিপুল মহাঙ্গন
বিছালো আলিম্পন,
অন্তরে তোর আসন্ন রাতি
জাগায় শঙ্খরব,
অস্তশৈলপাদমূলে তার
প্রসারিল অনুভব।

বিরহশয়ন বিছানো হেথায়,
কে যেন আসিল চোখে দেখা নাহি যায়।
অতীত দিনের বনের স্মরণ আনে
ম্রিয়মাণ মৃদু সৌরভটুকু প্রাণে।
গাঁথা হয়েছিল যে মাধবীহার
মধুপূর্ণিমারাতে
কণ্ঠ জড়ালো পরশবিহীন
নির্বাক বেদনাতে।

মিলনদিনের প্রদীপের মালা
পুলকিত রাতে যত হয়েছিল জ্বালা,
আজি আঁধারের অতল গহনে হারা
স্বপ্ন রচিছে তারা।
ফাল্গুনবনমর্মর-সনে
মিলিত যে কানাকানি
আজি হৃদয়ের স্পন্দনে কাঁপে
তাহার স্তব্ধ বাণী।

কী নামে ডাকিব, কোন্ কথা কব,
হে বধূ, ধেয়ানে আঁকিব কী ছবি তব।
চিরজীবনের পুঞ্জিত সুখদুখ
কেন আজি উৎসুক!
উৎসবহীন কৃষ্ণপক্ষে
আমার বক্ষোমাঝে
শুনিতেছে কে সে কার উদ্দেশে
সাহানায় বাঁশি বাজে।

আজ বুঝি তোর ঘরে, ওরে মন,
গত বসন্তরজনীর আগমন।
বিপরীত পথে উত্তর বায়ু বেয়ে
এল সে তোমারে চেয়ে।
অবগুণ্ঠিত নিরলংকার
তাহার মূর্তিখানি
হৃদয়ে ছোঁয়াল শেষ পরশের
তুষারশীতল পাণি।

৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৪