বিদেশী ফুল

হে বিদেশী ফুল, যবে আমি পুছিলাম-
“কী তোমার নাম”,
হাসিয়া দুলালে মাথা, বুঝিলাম তবে
নামেতে কী হবে।
আর কিছু নয়,
হাসিতে তোমার পরিচয়।।

হে বিদেশী ফুল, যবে তোমারে বুকের কাছে ধ’রে
শুধালেম, বলো বলো মোরে
কোথা তুমি থাকো,
হাসিয়া দুলালে মাথা, কহিলে, “জানি না, জানি নাকো”।

বুঝিলাম তবে
শুনিয়া কী হবে
থাকো কোন্ দেশে।
যে তোমারে বোঝে ভালোবেসে
তাহার হৃদয়ে তব ঠাঁই,
আর কোথা নাই।।

হে বিদেশী ফুল, আমি কানে কানে শুধানু আবার,
“ভাষা কী তোমার?”
হাসিয়া দুলালে শুধু মাথা,
চারিদিকে মর্ম্মরিল পাতা।
আমি কহিলাম, “জানি, জানি,
সৌরভের বাণী
নীরবে জানায় তব আশা।
নিঃশ্বাসে ভ’রেছে মোর সেই তব নিশ্বাসের ভাষা”।।

হে বিদেশী ফুল, আমি যেদিন প্রথম এনু ভোরে-
শুধালেম, “চেনো তুমি মোরে?”
হাসিয়া দুলালে মাথা, ভাবিলাম, তাহে এক রতি
নাহি কারো ক্ষতি।
কহিলাম, বোঝোনি কি তোমার পরশে
হৃদয় ভ’রেছে মোর রসে?
কেই বা আমারে চেনে এর চেয়ে বেশি,
হে ফুল বিদেশী।।

হে বিদেশী ফুল, যবে তোমারে শুধাই, বলো দেখি,
মোরে ভুলিবে কি?
হাসিয়া দুলাও মাথা; জানি জানি মোরে ক্ষণে ক্ষণে
পড়িবে যে মনে।
দুই দিন পরে
চ’লে যাবো দেশান্তরে,
তখন দূরের টানে স্বপ্নে আমি হবো তব চেনা;-
মোরে ভুলিবে না।।

বুয়েনোস্ এয়ারিস্,
১২ নভেম্বর, ১৯২৪।