বিহ্বলতা

অপরিচিতের দেখা বিকশিত ফুলের উৎসবে
পল্লবের সমারোহে।
মনে পড়ে, সেই আর কবে
দেখেছিনু শুধু ক্ষণকাল।
খর সূর্যকরতাপে
নিষ্ঠুর বৈশাখবেলা ধরণীর রুদ্র অভিশাপে
বন্দী করেছিল তৃষ্ণাজালে।
শুষ্ক তরু,
ম্লান বন,
অবসন্ন পিককণ্ঠ,
শীর্ণচ্ছায়া অরণ্য নির্জন।
সেই তীব্র আলোকেতে দেখিলাম দীপ্ত মূর্তি তার-
জ্বালাময় আঁখি,
বর্ণচ্ছটাহীন বেশ,
নির্বিকার,
মুখচ্ছবি।
বিরলপল্লব স্তব্ধ বনবীথি ‘পরে
নিঃশব্দ মধ্যাহ্নবেলা দূর হতে মুক্তকণ্ঠ স্বরে
করেছি বন্দনা।
জানি, সে না-শোনা সুর গেছে ভেসে
শূন্যতলে।
সেও ভালো, তবু সে তো তাহারই উদ্দেশে
একদা অর্পিয়াছিনু স্পষ্টবাণী, সত্য নমস্কার,
অসংকোচে পূজা-অর্ঘ্য
-সেই জানি গৌরব আমার।

আজ ক্ষুব্ধ ফাল্গুনের কলস্বরে মত্ততাহিল্লোলে
মদির আকাশ।
আজি মোর এ অশান্ত চিত্ত দোলে
উদ্ভ্রান্ত পবনবেগে।
আজি তারে যে বিহ্বল চোখে
হেরিলাম, সে যে হায় পুষ্পরেণু-আবিল আলোকে
মাধুর্যের ইন্দ্রজালে রাঙা।
তাই মোর কণ্ঠস্বর
আবেগে জড়িত রুদ্ধ।
পাই নাই শান্ত অবসর
চিনিবারে, চেনাবারে।
কোনো কথা বলা হল না যে,
মোহমুগ্ধ ব্যর্থতার সে বেদনা চিত্তে মোর বাজে।

ফাল্গুন, ১৩৩৮