বিরহ

তুমি যখন চ’লে গেলে
তখন দুই-পহর।
সূর্য তখন মাঝ-গগনে,
রৌদ্র খরতর।
ঘরের কর্ম সাঙ্গ করে
ছিলেম তখন একলা ঘরে,
আপন-মনে বসে ছিলেম
বাতায়নের ‘পর।
তুমি যখন চ’লে গেলে
তখন দুই-পহর।।

চৈত্র মাসের নানা খেতের
নানা গন্ধ নিয়ে
আসতেছিল তপ্ত হাওয়া
মুক্ত দুয়ার দিয়ে।
দুটি ঘুঘু সারাটা দিন
ডাকতেছিল শ্রান্তিবিহীন,
একটি ভ্রমর ফিরতেছিল
কেবল গুন্গুনিয়ে
চৈত্র মাসের নানা খেতের
নানা বার্তা নিয়ে।।

তখন পথে লোক ছিল না,
ক্লান্ত কাতর গ্রাম।
ঝাউশাখাতে উঠতেছিল
শব্দ অবিশ্রাম।
‘আমি শুধু একলা প্রাণে
অতিসুদুর বাঁশির তানে
গেঁথেছিলেম আকাশ ভ’রে
একটি কাহার নাম।
তখন পথে লোক ছিল না,
ক্লান্ত কাতর গ্রাম।।

ঘরে ঘরে দুয়ার দেওয়া,
আমি ছিলেম জেগে।
আবাঁধা চুল উড়তেছিল
উদাস হাওয়া লেগে।
তটতরুর ছায়ার তলে
ঢেউ ছিল না নদীর জলে,
তপ্ত আকাশ এলিয়ে ছিল
শুভ্র অলস মেঘে।
ঘরে ঘরে দুয়ার দেওয়া,
আমি ছিলেম জেগে।।

তুমি যখন চ’লে গেলে
তখন দুই-পহর।
শুষ্ক পথে, দগ্ধ মাঠে
রৌদ্র খরতর।
নিবিড়-ছায়া বটের শাখে
কপোত দুটি কেবল ডাকে-
একলা আমি বাতায়নে,
শূন্য শয়ন-ঘর।
তুমি যখন গেলে তখন
বেলা, দুই-পহর।।

শিলাইদহ
২১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৭