বিস্ময়

আবার জাগিনু আমি।
রাত্রি হল ক্ষয়।
পাপড়ি মেলিল বিশ্ব।
এই তো বিস্ময়
অন্তহীন।
ডুবে গেছে কত মহাদেশ,
নিবে গেছে কত তারা,
হয়েছে নিঃশেষ
কত যুগ যুগান্তর।
বিশ্বজয়ী বীর
নিজেরে বিলুপ্ত করি শুধু কাহিনীর
বাক্যপ্রান্তে আছে ছায়াপ্রায়।
কত জাতি
কীর্তিস্তম্ভ রক্তপঙ্কে তুলেছিল গাঁথি
মিটাতে ধূলির মহাক্ষুধা।
সে-বিরাট
ধ্বংসধারা-মাঝে আজি আমার ললাট
পেল অরুণের টিকা আরো একদিন
নিদ্রাশেষে,
এই তো বিস্ময় অন্তহীন।

আজ আমি নিখিলের জ্যোতিষ্কসভাতে
রয়েছি দাঁড়ায়ে।
আছি হিমাদ্রির সাথে
আছি সপ্তর্ষির সাথে,
আছি যেথা সমুদ্রের
তরঙ্গে ভঙ্গিয়া উঠে উন্মত্ত রুদ্রের
অট্টহাস্যে নাট্যলীলা।
এ বনস্পতির
বল্কলে স্বাক্ষর আছে বহু শতাব্দীর,
কত রাজমুকুটেরে দেখিল খসিতে।-
তারি ছায়াতলে আমি পেয়েছি বসিতে
আরো একদিন-
জানি এ দিনের মাঝে
কালের অদৃশ্য চক্র শব্দহীন বাজে।

কোণার্ক, শান্তিনিকেতন
১২ আষাঢ়, ১৩৩৯