বন্দিনী

তুমি বনের পূব পবনের সাথী,
বাদল মেঘের পথে তোমার ডানার মাতামাতি।
ওগো পাখী, বাঁধনহারা পাখী,
খাঁচার কোণে এই বিজনে আপন মনে থাকি।
হায় অজানা, জানিনা সে
উধাও তুমি কোন্ আকাশে,
কোন্ তমালের কাননতলে মধ্যদিনের তাপে
বনচ্ছায়ার শিরায় শিরায় তোমারি সুর কাঁপে।।

কোন্ রঙনে রঙীন্ তোমার পাখা?
তোমার সোনার বরণখানি ভাবনাতে মোর আঁকা
ওগো পাখী, বাঁধনহারা পাখী,
মুক্ত রূপের ধ্যানের ছায়ায় মগ্ন আমার আঁখি।
বন্দী মনের বদ্ধ ডানা,
চতুর্দ্দিকে কঠোর মানা,
তোমার সাথে উড়ে চলার মিলন মাগি মনে,-
শূন্যে সদাই গান ফেরে তাই অসীম অন্বেষণে।।

গান গাওয়া মোর সেই মিলনের খেলা,
তোমার গানের ছন্দে আমার স্বপন পাখা মেলা।
ওগো পাখী, বাঁধনহারা পাখী,
মনে মনে তোমায় পরাই গানের গাঁথন রাখী।
আজি আমার সুরের মাঝে
দূরের ডানার শব্দ বাজে,
মেঘের পথিক গানে আমার এলো প্রাণের কূলে,
বিরহেরি আকাশতলে নিল আমায় তুলে।।

গানের হাওয়ায় নিকট মিলায় দূরে-
দূর আসে সেই হাওয়ায় প্রাণের নিকট অন্তঃপুরে।
ওগো পাখী, বাঁধনহারা পাখী,
তোমার গানের মরীচিকায় শূন্য যে দাও ঢাকি’।
বাঁধনে তাই জাদু লাগে,
বীণার তারে মূর্ত্তি জাগে,
রাগিণীতে মুক্তি সে দেয়, ওগো আমার দূর,
তোমার দেওয়া না-শোনা গান বাঁধে-যে তা’র সুর।।

৫ কার্ত্তিক, ১৩৩৫